শুক্রবার, ১০ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

সরকার ১৪ বছরে নদীপথে ৭,৮৬২ কিলোমিটার নাব্যতা নিশ্চিত করেছে

সরকার ১৪ বছরে নদীপথে ৭,৮৬২ কিলোমিটার নাব্যতা নিশ্চিত করেছে

পজিটিভ বিডি ২৪ডট নিউজ (ঢাকা): সরকার গত ১৪ বছরে ড্রেজিং বা ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে দেশের ৫৩টি অভ্যন্তরীণ নদীর ৭৮৬২ কিলোমিটার রুটে নাব্যতা ফিরিয়ে এনেছে। শুষ্ক মৌসুমে নৌপথের দৈর্ঘ্য বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬১৯২ কিলোমিটার- যা ২০০৯-১০ সালে ছিল মাত্র ২৫০০ কিলোমিটার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২৫ সালের মধ্যে দেশে ১০ হাজার কিলোমিটার নৌপথ ড্রেজিংয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিলেন।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) সূত্রে জানা গেছে, লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৭৯ শতাংশ নদী ড্রেজিং কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। অভ্যন্তরীণ নৌপথে পণ্য ও যাত্রীবাহী নৌযান নির্বিঘেœ ও নিরাপদে চলাচলের জন্য নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় বিআইডব্লিউটিএর মাধ্যমে ড্রেজিংয়ের কাজ বাস্তবায়ন করছে।
বিআইডব্লিউটি’র প্রধান প্রকৌশলী (ড্রেজিং) প্রকৌশলী রাকিবুল ইসলাম তালুকদার বলেন, নৌপথে প্রায় ১০ হাজার ৫০০ কিলোমিটার নাব্যতা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে ২০১২ সালে ড্রেজিংয়ের একটি মাস্টার প্ল্যানের আওতায় বিআইডব্লিউটি’র জন্য নির্ধারিত ১৭৮টি নদী খনন ও পুনরুদ্ধারের কাজ শুরু হয়। তিনি বলেছিলেন, ২০২৫ সালের মধ্যে, বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে ১০ হাজার কিলোমিটার নদীপথের নাব্যতা পুনরুদ্ধারের জন্য ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের কাজ শেষ হবে।
তালুকদার বলেন,‘অভ্যন্তরীণ নৌপথে ৫৩টি নদী-রুটের ক্যাপিটাল ড্রেজিং (প্রথম পর্যায় : ২৪টি নদীপথ) (২য় সংশোধিত)’ শীর্ষক প্রকল্পের অধীনে জুলাই ২০১২ থেকে ড্রেজিং কাজ শুরু হয় এবং ড্রেজিং কাজ জুন, ২০২২-র মধ্যে শেষ হয়। এই প্রকল্পে প্রায় ১৭০০ টাকা কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। এই প্রকল্পের অধীনে, ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে বন্ধ হওয়া এমজি চ্যানেলটির নাব্যতার ফিরিয়ে এনে পণ্যসম্ভারসহ সব ধরণের শিপিংয়ের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। সরকারের এ পদক্ষেপের কারণে খাগদন, লাউকাঠি, ভোলার নালা, কীর্তনখোলা, ইছামতি, সুরমা, রক্ত, বাউলাউ, রোকসা নীলা, চাচি, কংস, তিতাস, মধুমতি, আপার কুমার ও ভৈরব নদীর নাব্যতা ফিরে এসেছে। এসব নদীতে এখন সারা বছরই পণ্যবাহী জাহাজ চলাচল করে।
নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, প্রকল্পের আওতায় ২৪টি নৌপথে মোট ৯৯৭ লাখ ঘনমিটার খনন করে ২৩৮৬ কিলোমিটার নৌপথের নাব্যতা উন্নত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে এবং এরই মধ্যে কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
নৌপরিবহন সচিব মোস্তফা কামাল বলেন, ২য় সংশোধনী প্রকল্পের আওতায় অভ্যন্তরীণ নৌপথের ৫৩টি রুটে ক্যাপিটাল ড্রেজিং (প্রথম পর্যায়: ২৪টি নৌপথ) ২০১১ সালে বন্ধ হয়ে যাওয়া এমজি চ্যানেলটি ২০১৫ সালে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নৌ চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয় এবং এ পর্যন্ত এই চ্যানেল দিয়ে ২০০১৬৯টি জাহাজ চলাচল করেছে। বর্তমানে চ্যানেলটির সর্বনি¤œ পানির গভীরতা ১২ ফুট এবং উচ্চ জোয়ারের সময় ২০ ফুট পর্যন্ত এবং প্রস্থ ২০০ থেকে ৩০০ ফুট। সচিব আরও বলেন, আগে নাব্যতা সংকটের কারণে খাগদন, লাউকাঠি, ভোলার নালা, কীর্তনখোলা, ইছামতি ও কর্তলী দিয়ে কার্গো চলাচল করতে পারছিল না।
প্রকল্পের অধীনে, নাব্যতা ফিরিয়ে আনার পর, সারা বছর ধরে নদীপথগুলোতে জাহাজ চলাচলের উপযুক্ত হয়েছে। আগে ভৈরব-চাতক নৌপথের নাব্যতার কারণে শুষ্ক মৌসুমে অর্ধেক মালামাল চলাচল করলেও, এখন প্রতিদিন গড়ে ২০০টি কার্গো পাথর, সিমেন্ট, বালি, কয়লা নিয়ে চলাচল করছে বলে জানান তিনি। ড্রেজিংয়ের ফলে এখন খুলনা-নোয়াপাড়া নৌপথে প্রতিদিন গড়ে ৪০ থেকে ৫০ কার্গো সার, সিমেন্ট, বালি, কয়লা, চাল ও গম চলাচল করছে। তবে আগে জোয়ারের সুবিধা ছাড়া সমুদ্রপথে মালামাল চলাচল করতে পারত না।
খালিদ মাহমুদ চৌধুরী জানান, ১০ হাজার কিলোমিটার নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনা নিয়ে মন্ত্রণালয় কাজ করছে। এর মধ্যে ‘দ্বিতীয় সংশোধিত’ শীর্ষক প্রকল্পের অধীনে অভ্যন্তরীণ নৌপথের ৫৩টি রুটের (প্রথম পর্যায়: ২৪টি নৌপথ) ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে প্রায় ৩৬৯২ কিলোমিটার নৌপথের নাব্যতা পুনরুদ্ধার করা হয়েছে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, ২৪টি নৌপথ প্রকল্পের আওতায় ড্রেজিং করে পণ্যবাহী জাহাজ সার্বক্ষণিক চলছে।
কংশা নদীর গাগলাজোর-মোহনগঞ্জ, বাউলাউ নদীর আনোয়ারপুর-তাহেরপুর, বরিশাল-পটুয়াখালী নৌপথের সাহেবের হাট নালা, তিতাস নদীর দাউদকান্দি-হোমনা-রামকৃষ্ণপুর, চালতী নদীর সুনামগঞ্জ-ডলুরা নৌপথ, মেঘনা লাঙ্গলবাঁধের নৌপথ, নারায়ণগঞ্জের নারায়ণগঞ্জ-ডলুরা ও মগরা নদীর নৌপথগুলো প্রায় মৃত হয়ে পড়েছিল। তবে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নাব্যতা ফিরিয়ে আনার পর এসব রুট খুলে দেওয়া হয়েছে বলে জানান খালিদ। ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে পতিত বা নিচু জমি ভরাট করে প্রায় ৫৫০০ একর অকৃষি জমিকে কৃষি জমিতে রূপান্তর করা হয়েছে। এ ছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, খেলার মাঠ, ঈদগাহ মাঠ, শিশু পার্ক, স্টেডিয়াম, গোরস্থান, গীর্জা ও মন্দিরের প্রায় ৬০০ নিচু জায়গা ভরাট হয়ে গেছে।
বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমডোর আরিফ আহমেদ মুস্তফা জানান, ভূমিহীনদের জন্য নির্মিত ১০টি আশ্রয়কেন্দ্রের নিচু জায়গা ভরাট করা হয়েছে। তিনি বলেন, মরা নদীগুলো ড্রেজিংয়ের কারণে এখন সারা বছরই নদীগুলোতে পানি থাকে। সেচ কাজে নদীর পানি ব্যবহার করায় কৃষি উৎপাদন বেড়েছে। ড্রেজিংয়ের ফলে নদীর গভীরতা বাড়ে ও বন্যার পানি দ্রুত হ্রাস পায়।  ড্রেজিংয়ের কারণে নিচু এলাকায় ভরাট হয়ে বন্যা কমে গেছে। এক কথায়, ২৪টি নৌপথ ড্রেজিং সংশ্লিষ্ট এলাকার পরিবেশে ব্যাপক ইতোবাচক প্রভাব ফেলেছে।
বর্ষাকালে সারা দেশে অভ্যন্তরীণ নৌপথের দৈর্ঘ্য প্রায় ২৪ হাজার কিলোমিটার। শুষ্ক মৌসুমে তা নেমে আসে ৬ হাজার কিলোমিটারে। সব সময় যাতে কোনো ধরনের বাঁধা ছাড়াই জাহাজ চলাচল করতে পারে- সেজন্য সরকার এই সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে।

CATEGORIES
Share This

COMMENTS