মঙ্গলবার, ১৪ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ড. ইউনূস শ্রমিকের পাওনা বুঝিয়ে দেননি, ঘুষেও রফা হয়নি: তথ্যমন্ত্রী

ড. ইউনূস শ্রমিকের পাওনা বুঝিয়ে দেননি, ঘুষেও রফা হয়নি: তথ্যমন্ত্রী

পজিটিভ বিডি  নিউজ ২৪ডট কম (ঢাকা): পজিটিভ বিডি ২৪ডট নিউজ (ঢাকা): তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে শ্রমিকের পাওনা বুঝিয়ে না দেওয়ার অপরাধ সংঘটনের জন্য এবং তার প্রতিষ্ঠান ঘুষ দিয়ে সেটি ‘ম্যানেজ’ করার অপচেষ্টাও করেছে।
আজ সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ’র (পিআইবি) গবেষক পপি দেবী থাপা গ্রন্থিত ‘শরণার্থীর জবানবন্দি ১৯৭১’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন শেষে  সাংবাদিকরা গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলা নিয়ে প্রশ্ন করলে মন্ত্রী এ কথা বলেন। একুশে পদকপ্রাপ্ত পিআইবি’র মহাপরিচালক ও গবেষণা গ্রন্থটির মুখবন্ধকার জাফর ওয়াজেদ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
উল্লেখ্য, দুপুরে শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলার একটি ধারায় গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ড. ইউনূসসহ চার জনের ৬ মাসের কারাদন্ড ও ৫ হাজার টাকা জরিমানা এবং আরেকটি ধারায় ২৫ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে ১৫ দিনের কারাদন্ডের রায় দিয়েছেন ঢাকার আদালত। তবে রায় ঘোষণার পর আদালত আপিলের শর্তে ইউনূসের জামিন মঞ্জুর করেন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘পৃথিবীর বহু নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ফৌজদারি ও দেওয়ানী অপরাধে শাস্তিপ্রাপ্ত হয়েছেন, অনেকে অনেক দিন জেলও খেটেছেন। যৌথভাবে নোবেল পুরস্কার পাওয়া একজন আরেকজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে এমন ঘটনাও আছে। আর ড. মুহাম্মদ ইউনূস সাহেবের প্রতি যথাযথ সম্মান রেখেই বলতে চাই যে, ইউনূস সাহেব বহু বছর ধরে শ্রমিকদের পাওনা বুঝিয়ে দেননি। এরপর যখন শ্রমিকরা আদালতে গেছে, তখন আদালতের বাইরে দু’জন শ্রমিক নেতাকে তার প্রতিষ্ঠান থেকে ৩ কোটি করে ৬ কোটি টাকা ঘুষ দিয়ে ম্যানেজ করার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু সাধারণ শ্রমিকরা তো আর টাকা পায় নাই, দু’জন নেতা টাকা পেলে তো আর হবে না। সে কারণে সাধারণ শ্রমিকরা মামলায় গেছে।’
শ্রমিকের অধিকার নিয়ে তো অনেক কথা হয়, শ্রমিক অধিকার নিশ্চিত করার জন্য আমাদের বন্ধুরাষ্ট্রগুলো অনেক কথা বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বন্ধুরাষ্ট্ররা গার্মেন্টস শ্রমিকের পাওনা আদায়ের কথা বলে। আশা করবো তারা এ ব্যাপারেও কথা বলবে। শ্রমিকের পাওনা বুঝিয়ে না দেওয়ার কারণেই অর্থাৎ একটি অপরাধ সংগঠিত হয়েছে বিধায় মামলা হয়েছে।’
বিএনপি নির্বাচনের বিরুদ্ধে জাতিসংঘকে চিঠি দিয়েছে -এ নিয়ে এক প্রশ্নে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বিএনপি তো এখন দিক-বিদিক জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে। তারা ভেবেছিলো দেশে নির্বাচন হবে না এবং নির্বাচন হলেও জনগণের অংশগ্রহণ থাকবে না। এখন তারা বুঝতে পেরেছে, জনগণের ব্যাপক অংশগ্রহণে একটি উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়েছে যেখানে বিএনপির সমর্থকরাও যোগ দিয়েছে।
তারা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে থেকেই পেট্রোলবোমা, সন্ত্রাস, অগ্নিসন্ত্রাস চালিয়ে মানুষ হত্যা করে, মা ও শিশুকে এক সাথে হত্যা করে, ট্রেন লাইন কেটে, ট্রেনের ওপর পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ করে, গাড়িতে, বাসে মানুষের ওপর পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ করে নির্বাচন ভন্ডুল করতে চেয়েছে, পারেনি। না পেরে তারা এখন তাদের সেই পুরনো কায়দা বিদেশিদের কাছে চিঠি লেখা শুরু করেছে।’
‘যারা পেট্রোলবোমা সন্ত্রাস চালিয়েছে তাদের অনেকেই গ্রেপ্তার হয়েছে, ট্রেন লাইন যারা কেটে ফেলেছিলো তারা ধরা পড়েছে, স্বীকার করেছে কে টাকা দিয়েছে, কার নির্দেশে এগুলো করেছে, এগুলো দিবালোকের মতো স্পষ্ট’ উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি এই কাজগুলো ২০১৩, ১৪ ও ১৫ সালে করেছে, এখন আবার করছে। এখন আত্মরক্ষার্থে চিঠিপত্র লিখছে। যাদের কাছে চিঠি লিখছে, তারাও এই নির্বাচনকে গ্রহণ করেছে, পর্যবেক্ষক পাঠিয়েছে এবং তারা বলছে যে, নির্বাচন যেন সহিংসতামুক্ত হয়। দেশের বিরুদ্ধে বহু চিঠি বিএনপি লিখেছে, এই চিঠিতে কোনো লাভ হবে না।’
ভোট বন্ধ করার জন্য বিএনপি এখন প্রার্থীদের ওপর হামলার পরিকল্পনা করছে, এ সম্পর্কিত প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, কোনো  নির্বাচনী এলাকায় কোনো প্রার্থী মারা গেলে সেই আসনে নির্বাচনটা বন্ধ হয়ে যায়। সে কারণে তারা এই পরিকল্পনা করেছে। তবে সন্ত্রাসী দলের মতো এ সব ষড়যন্ত্র করে কোনো লাভ হবে না।
‘শরণার্থীর জবানবন্দি ১৯৭১’ গ্রন্থ প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, আমাদের মুক্তিযুদ্ধ যে কতো বেদনার, কত সংগ্রামের, সেটি যারা মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি তাদের পক্ষে অনুধাবন করা কঠিন। আমরা ১ কোটি শরণার্থীর কথা বলি, কিন্তু দেশের অভ্যন্তরেও ১ কোটি মানুষ শরণার্থী হয়েছিলো, যাদের ঘরবাড়ি হানাদারেরা জ্বালিয়ে দিয়েছিলো, তারা অপরের ঘর-বাড়িতে থাকতো।
বাল্যস্মৃতিচারণ করে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘চট্টগ্রামের প্রান্তে রাঙ্গুনিয়ায় আমাদের গ্রামটা ছিলো শরণার্থী যাওয়া আসার রোড। সেই পথ ধরে মিজোরাম যেতে হলে উঁচু পাহাড় পাড়ি দিতে হতো। অনেক বাচ্চা ও বয়স্ক যারা পাহাড়ে উঠতে পারতো না, তাদের ফেলে অন্যরা চলে যেতো -এ রকম বহু ঘটনা ঘটেছে।’ গ্রন্থকার, পিআইবি’র সহ-সম্পাদক আকিল উজ-জামান, গবেষক মোহাম্মদ এনায়েত হোসেন বইমোড়ক উন্মোচনে অংশ নেন।

CATEGORIES
Share This

COMMENTS