শুক্রবার, ১০ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

স্ট্রিট আর্ট ও নকশায় পোস্টার লাগালে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে : মেয়র আতিক

স্ট্রিট আর্ট ও নকশায় পোস্টার লাগালে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে : মেয়র আতিক

পজিটিভ বিডি ২৪ডট নিউজ (ঢাকা): দৃষ্টিনন্দন নকশার উপর বা স্ট্রিট আর্টে যারা পোস্টার লাগাবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘আমরা শহরকে দৃষ্টিনন্দন করার অনেক কাজই করি। কিন্তু দুঃখের বিষয়, সে কাজগুলো কিছুদিন পরেই পোস্টারের আড়ালে ঢেকে যায়। মহাখালীতে যে দৃষ্টিনন্দন স্ট্রিট আর্ট করা হয়েছে, তার ওপর আমি কোনো পোস্টার দেখতে চাই না। যে পোস্টার লাগাবে তাকে সবাই মিলে প্রত্যাখান করবো। এসব সুন্দর চিত্রকর্মে পোস্টার লাগালে কঠোর ব্যবস্থা নিব। পোস্টার লাগিয়ে এই শহরকে নোংরা করার অধিকার কারো নেই। যারা পরিবেশ নষ্ট করে, তাদের ধিক্কার জানাতে হবে।’
আজ সোমবার দুপুরে রাজধানীর মহাখালী ফ্লাইওভারে দৃষ্টিনন্দন স্ট্রিট আর্ট পরিদর্শন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডিএনসিসি মেয়র এসব কথা বলেন।
উল্লেখ্য, ডিএনসিসির উদ্যোগে বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশের সহযোগিতায় বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে মহাখালী ফ্লাইওভারে স্ট্রিট আর্ট শুরু হয়েছে। স্বাধীনতার মাস মার্চের মধ্যে পুরো মহাখালী ফ্লাইওভারের স্ট্রিট আর্ট সম্পন্ন করা হবে।
ডিএনসিসি মেয়র বলেন, ‘আমরা এই শহরে কিভাবে সুস্থ থাকতে পারি সেই চেষ্টা করি। অনেকে দেখেছেন মগবাজার ফ্লাইওভারের পিলারগুলো পোস্টারে ছেয়ে থাকতো। আমরা সেখানে দৃষ্টিনন্দন গ্রাফিতি একে দিয়েছি। ঈদের সময় দেখলাম একজন বাবা তার ছোট মেয়েকে নিয়ে সেই গ্রাফিতির সামনে ছবি তুলছে। এটাই আমাদের স্বার্থকতা।’
তিনি বলেন, ‘আমরা একটি সুস্থ, সচল ও আধুনিক ঢাকা চাই। বিজয়ের মাসে মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণ করে বলতে চাই, তারা গাড়ি-বাড়ি কিংবা অর্থসম্পদের জন্য দেশ স্বাধীন করেননি। তারা কেবল দেশের কথা ভেবেই স্বাধীনতা এনেছেন। জাতির পিতার ডাকে মুক্তিযোদ্ধারা স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে যে স্বাধীন বাংলাদেশ অর্জিত হয়েছে সে দেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার দায়িত্ব আমাদের। নির্বাচন এলেই ঢাকা শহর পোস্টারে ঢেকে যায়। স্মার্ট বাংলাদেশে আমরা কেন ডিজিটাল ক্যাম্পেইন করতে পারছি না? নির্বাচন কমিশন ইতিমধ্যে প্রজ্ঞাপন দিয়েছে। আমি সবাইকে অনুরোধ করতে চাই-নির্দিষ্ট স্থান ছাড়া পোস্টার লাগানো যাবে না। যত্রতত্র পোস্টার না লাগালে শহর নোংরা হবে না।’
আতিকুল ইসলাম বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা চেয়েছিলেন লাল সবুজের পতাকা। তাঁরা চেয়েছিলেন বাংলাদেশ একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হবে। আমরা পরাধীন থাকবো না। কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে স্বাধীনতা মানেই রাস্তায় ময়লা ফেলে দেয়া না। স্বাধীনতা মানেই আইন ভঙ্গ করা না। স্বাধীনতা মানেই লাল লাইট জ্বলার পরেও গাড়ি চালানো না। দেশটাকে ও শহরটাকে রক্ষার দায়িত্ব আমাদেরই নিতে হবে।
মহাখালী ফ্লাইওভারের স্ট্রিট আর্ট রক্ষায় জনগণকে এগিয়ে আসার আহবান জানিয়ে মেয়র বলেন, পুরো মহাখালী ফ্লাইওভার রঙিন করে সাজাতে অনেক টাকার প্রয়োজন। বার্জার পেইন্টস বিনামূল্যে এটি করে দিচ্ছে। তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই। ছাদে ও দেয়ালে রঙ করা অনেক সহজ হলেও ছাদের নিচে (সিলিং) রঙ করা অনেক কঠিন কাজ। এতো কষ্ট করে, এতো খরচ করে নান্দনিকভাবে সাজানো হচ্ছে এটি রক্ষা করতে নগরবাসীকে এগিয়ে আসতে হবে, কাউন্সিলরদের এগিয়ে আসতে হবে।
তিনি বলেন, ‘এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নিচে নান্দনিক কাজ করার জন্য প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা সে মোতাবেক কাজ করছি। ইতোমধ্যে কাউলা এক্সপ্রেসওয়ের নিচে প্লে-জোন করা হয়েছে। শিগগিরই চালু করে দেয়া হবে। আমরা শহরের প্রতিটি রাস্তাতেই এমন স্ট্রিট আর্ট দেখতে চাই।’
মহাখালী ফ্লাইওভারের নিচে ফাঁকা জায়গায় টেবিল টেনিস বোর্ড এবং দাবা খেলার বোর্ডের ব্যবস্থা করে দেয়া হবে বলেও জানান তিনি।
বক্তৃতা শেষে ডিএনসিসি মেয়র নিজে রঙ তুলি নিয়ে আর্ট করে চিত্রশিল্পীদের উৎসাহিত করেন।
বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ-এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর রূপালী চৌধুরী বলেন, ‘ঢাকা শহরে ট্রাফিক জ্যামে আটকে থেকেও একজন ব্যক্তি এমন শিল্পকর্ম দেখতে পারবেন ফ্লাইওভারের মতো আধুনিক স্থাপনার গায়ে। এই শিল্পকর্মের রঙ, এর সৌন্দর্য তাদের মানসিক শান্তি দিবে। শহরের বুকেও মনে করিয়ে দিবে তার শেকড়ের কথা। রঙের নান্দনিকতায় এভাবে ইতিবাচকতার চর্চা বার্জার সবসময়ই করে এসেছে এবং আগামীতেও করবে। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এবং মেয়র মহোদয়কে ধন্যবাদ আমাদের এই প্রকল্পে কাজ করার সুযোগ করে দেয়ার জন্য।’
পরিদর্শনকালে আরও উপস্থিত ছিলেন ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা, প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ আমিরুল ইসলাম, আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জুলকার নায়ন, প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ মাকসুদ হাসেম, চিত্রশিল্পী মনিরুজ্জামান, ২৪ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. সফিউল্লাহ, ২৫ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবদুল্লাহ আল মঞ্জুর, সংরক্ষিত আসনের নারী কাউন্সিলর আমেনা বেগম ও সামসুন নাহার হেলেন, বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশের চীফ অপারেটিং অফিসার মহসীন হাবিব চৌধুরী ও চীফ বিজনেস অফিসার একেএম সাদেক নেওয়াজ প্রমুখ।

CATEGORIES
Share This

COMMENTS