মঙ্গলবার, ২১শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

দেশের নদীগুলোকে বাঁচিয়ে রাখতে পানির প্রবাহের ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

দেশের নদীগুলোকে বাঁচিয়ে রাখতে পানির প্রবাহের ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

পজিটিভ বিডি ২৪ডট নিউজ (ঢাকা): প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের নদীগুলোকে মানবদেহের সঙ্গে তুলনা করে এগুলোকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য পানির প্রবাহ যথাযথভাবে প্রবাহমান রাখতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন
তিনি বলেন, ‘হার্টে ব্লক তৈরি হলে মানুষ মারা যায়। আমাদের নদী খালগুলো মানুষের প্রাণের মতো। এগুলোকে প্রবাহিত রাখতে আমাদের ব্যবস্থা নিতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী আজ সকালে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে পানি সম্পদ মনন্ত্রণালয়ের ৮০টি উন্নয়ন প্রকল্প পুন:খননকৃত ৪৩০টি ছোট নদীখালজলাশয়ের উদ্বোধন এবং নতুন অনুমোদিত ২০টি উন্নয়ন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে ভাষণে একথা বলেন।
শেখ হাসিনা একই অনুষ্ঠান থেকে স্বাস্থ্য পরিকার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন দেশের প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেকমিউনিটি আই সেন্টার স্থাপনকার্যক্রমের ৪র্থ পর্যায়ে ৬৫টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্থাপিতকমিউনিটি আই সেন্টারএর উদ্বোধন করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশ নদীমাতৃক, নদীই আমাদের জীবন। এগুলো ঠিক শরীরের ধ্বমনিশিরাউপশিরার মত।
তিনি উদাহারণ দেন হার্টের ধ্বমনি ব্লক হলে রক্ত যেমন সঞ্চালন হতে না পেরে মানুষ মারা যায় আমাদের দেশের নদীনালাও আমাদের জীবনের মতই। তাদের সচল রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। নদীর প্রবাহ যেন অব্যাহত থাকে সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমাদের প্রতিটি প্রকল্প গ্রহণ সম্পন্ন করতে হবে।
এজন্য বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, আমাদের প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বা উন্নয়নের নাম করে কিন্তু সমস্ত খাল, বিল, নদীনালা, পুকুর পর্যন্ত ভরাট করে ফেলা হয়। আমি মনে করি এটা অত্যন্ত গর্হিত একটি কাজ।
তিনি বলেন, আমাদের দেশে যখনই যে প্রকল্প নেওয়া হবে অবশ্যই এই পানি সম্পদকে রক্ষা করার ব্যবস্থা সেখানে সকলকে নিতে হবে আমি তা চাই।
যে কারণে আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর থেকে নদীগুলো ড্রেজিংয়ের উদ্যোগ নেয় এমনকি৭৫ জাতির পিতাকে হত্যার পর ছয় বছর প্রবাস জীবন কাটাতে বাধ্য হয়ে৮১ সালে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হয়ে জোর করে দেশে ফিরে আসার পর থেকেই তিনি নদী ড্রেজিয়ের দাবি তোলেন বলেও জানান। কিন্তু অনেকেই তাকে সে সময়ে সমর্থন করতে পারেনি, নদীর পাড় বাঁধানোর দিকেই নজর ছিল।
সরকার প্রধান বলেন, ‘শুধু পাড় বাাঁধিয়েই হবে না। তাহলে তো নদী ভরাট হয়ে যাবে। বাংলাদেশ একটা দ্বীপ, পলিদ্বারা সৃষ্ট। আমরা সরকারে এসেই জাতির পিতার পদাংক অনুসরণ করেই প্রত্যেকটা এলাকায় নদী, খাল, বিল, পুকুর, জলাধার, হাওড়,বাওড় যা কিছু আছে সেগুলোতে যেন পানির প্রবাহ সচল থাকে সেই সাথে খালগুলোর সঙ্গে নদীর সংযোগ খনন পুন:খননের উদ্যোগ গ্রহণ করি। যখনই আমরা সরকারে এসেছি নদী মাতৃক এই দেশে নদীর সংযোগগুলো সচল করারও উদ্যোগ নেই।
যশোরের শার্শা উপজেলা, পাবনার সাঁথিয়া উপজেলা এবং মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলা ভাচুয়ালি অনুষ্ঠানে যুক্ত ছিল। তিনি উপস্থিত স্থানীয়দের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
প্রধানমন্ত্রী গত ১৫ বছরে বাস্তবায়িত উন্নয়ন পরিকল্পনা সমন্বিতজয়যাত্রানামে একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক এবং পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক।
অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমের ওপর দুটি পৃথক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার ২০১৮ সালে বাংলাদেশ দ্বীপ উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন করে, যা পরবর্তীতে ২১০০ সাল পর্যন্ত এই বদ্বীপকে ধরে রাখা এবং উন্নত করার জন্যডেল্টাপ্ল্যান২১০০ রুপান্তর করা হয়।
আমাদের ব্যবসাবাণিজ্য পণ্য পরিবহন সবচেয়ে সুলভে হয় নৌপথে। যে কারণে একে সচল রাখায় তাঁর সরকার গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপেরও উল্লেখ করেন তিনি

সরকার প্রধান বলেন, গত ১৪ বছরের বেশি সময় দেশ পরিচালনায় তাঁর সরকার ৯৯০কি.মি. নদী তীর সংরক্ষণ করেছে। ,৫৪৪ কি.মি. বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। ১০,৫৭১ কি.মি. বাঁধ মেরামত করায় ৩১টি জেলাকে নদী ভাঙ্গনের হাত থেকে সুরক্ষা করা সম্ভব হয়েছে। ,৩০০ কি.মি নদী ড্রেজিং করা হয়েছে। ড্রেজিংকৃত মাটি যত্রতত্র না ফেলে তার সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে ,০৮৬ বর্গ কি.মি ভূমি পুনঃরুদ্ধার করতে পেরেছে, যেটা আমাদের অর্থনৈতিক কাজে ব্যবহার হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সাল থেকে এই ২০২৩ সাল পর্যন্ত তাঁর সরকার পানি সম্পদ উন্নয়ন খাতে ৯৭০টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। দেশব্যাপী ,৮১১ ব্রীজকালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, যখন কোন প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয় রাস্তাঘাট, রেললাইন, স্থাপনা যাই করা হোক সেখানে যেন কোনভাবেই পানির প্রবাহ বাধাপ্রাপ্ত না হয়। কালভার্ট বা ব্রীজ করে দেয়ার জন্য তাঁর নির্দেশনা রয়েছে। অথবা বন্যার সময় রাস্তা ভেঙ্গে গেলে যে জায়গাটা ভেঙ্গে যাচ্ছে সেখানে আর মাটি ভরাট না করে কালভার্ট বা ব্রীজ করে দেয়ারও নির্দেশনা দেওয়া রয়েছে, যেন পরবর্তিতে বানের পানি সঠিকভাবে নেমে যেতে পারে।
তিনি বলেন, কাজেই আমাদের দেশে যে কোন পরিকল্পনা করার সময় এসব বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। সেভাবেই পরিকল্পনা নিতে হবে। তাছাড়া এবং জলাবদ্ধতা যেন সৃষ্টি না হয় সেদিকেও দৃষ্টি দিতে হবে। এজন্য প্রতিটি প্রকল্পের সঙ্গে অন্তত একটা জলাধার রাখতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার ৪১ সেট ড্রেজার ক্রয় করেছে যা ব্যবহার করে ৫৩৫৫কি.মি. নতুন সেচ খাল খনন   ,৯৪২ সেচখাল পুন:খনন করেছে এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় বন্যার আগাম সতর্ক বার্তা মোবাইলে এসএমএস এর মাধ্যমে জনগণকে প্রেরণের উদ্যোগ নিয়েছে।
জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সরকার পানি খাতকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, একবার ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের পর প্রতিবছর মেনটেইনেন্স ড্রেজিং করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন জনিত অভিঘাত মোকাবেলা করার জন্য আমাদের যে প্রস্তুতি তার অংশ হিসেবেই এগুলো করা হচ্ছে এবং গৃহহীণদের মধ্যে বিনামূল্যে ঘর বিতরণকালে ঝুকিপূর্ণ এলাকায় দুর্যোগ সহনীয় ঘরবাড়ি নির্মাণ করে দেয়া হচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, প্রকৃতিকে তার আপন খেয়ালে চলতে দিতে হবে এবং এরই মধ্যে আমাদের সম্পদ রক্ষারও ব্যবস্থা নিতে হবে।
৯৮ শতাংশ মানুষকে সুপেয় পানির সুবিধা প্রদানের আওতায় আনার মাধ্যমে এসডিজির একটি লক্ষ্য সরকার বাস্তবায়ন করছে উল্লেখ করে তিনি জলপথ পরিচ্ছন্ন্ রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। চলাচলের সময় জলপথে বা নদীতে এমনকি সড়কমহাসড়কে বর্জ্য না ফেলার জন্য এবং বর্জ্য ফেলার নির্দিষ্ট স্থানে বর্জ্য ফেলে পরিবেশকে দূষণমুক্ত রাখার জন্যও তিনি সকলের প্রতি আহবান জানান। কলকারখানার দূষিত বর্জ্য জলাধার বা নদীতে না ফেলার বিষয়েও তিনি সতর্ক করেন।
যত্রতত্র যেন শিল্প কারখানা গড়ে না ওঠে সেদিকে নজর দিয়ে তাঁর সরকার সারাদেশে ১শটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, জিয়া, খালেদা জিয়া বা এরশাদ এরা কেউই এদিকে নজর দেয়নি। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পরই দূষণ প্রতিরোধে সচেতনতা সৃষ্টির উদ্যোগ নিয়েছে। আপনাদেরও খেয়াল রাখতে হবে কোনমতেই আমাদের পানি সম্পদ যেন দূষিত না হয়।
তিনি বলেন, আমি আশাকরি পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় গৃহীত প্রকল্পের মাধ্যমে পানির চাহিদা ভিত্তিক অতিরিক্ত ব্যবহার প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ অর্জন করা সম্ভব। এর মাধ্যমে বর্তমানের চাহিদা মিটিয়ে ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য একটা সুরক্ষিত পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা আমরা রেখে যেতে চাই

 

CATEGORIES
Share This

COMMENTS