শুক্রবার, ১৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

বিএনপি-জামায়াতের ধ্বংসযজ্ঞ থেকে দেশকে বাঁচাতে আরেকবার ‘নৌকা’য় ভোট দিন : প্রধানমন্ত্রী

বিএনপি-জামায়াতের ধ্বংসযজ্ঞ থেকে দেশকে বাঁচাতে আরেকবার ‘নৌকা’য় ভোট দিন : প্রধানমন্ত্রী

পজিটিভ বিডি ২৪ডট নিউজ (ঢাকা): প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বিএনপিজামায়াতের ধ্বংসযজ্ঞ থেকে দেশকে বাঁচাতে এবং দেশ সেবার জন্য আরেকবার সুযোগ দিতে তাঁর দলের নির্বাচনী প্রতীকনৌকা ভোট দিতে জনগণের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ যেন আবারও জনগণের সেবা করতে পারে সেজন্য নৌকায় ভোট দেওয়ার জন্য আমি আপনাদের সবাইকে আহ্বান জানাচ্ছি। বিএনপিজামায়াত দেশকে ধ্বংস করবে এবং আমার দলই দেশকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাতে পারবে।
প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা আজ অপরাহ্নে ভাঙ্গার নবনির্মিত ডা. কাজী আবু ইউসুফ স্টেডিয়ামে ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের আয়োজনে পদ্মা সেতুতে রেল চলাচলের উদ্বোধন উপলক্ষ্যে আয়োজিত মহাসমাবেশে দেয়া ভাষণে একথা বলেন।
তিনি বলেন, “আমি আজ আপনাদের উপহার দিচ্ছি, পদ্মা সেতুর পর পদ্মা রেল সেতু।
মাওয়ায় পদ্মা রেল সেতু উদ্বোধনের পর বিশেষ ট্রেনে পদ্মা নদী পার হয়ে মাওয়া থেকে ভাঙ্গায় পৌঁছেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, নৌকা আপনাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছে। নৌকা পদ্মা সেতুরেল সেতু দিয়েছে, রাস্তাঘাটের উন্নতি করেছে, নৌকা আপনাদেরকে স্কুলকলেজবিশ^বিদ্যালয় দিচ্ছে, নৌকাই এদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করেছে। তাই, নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার যাতে আপনাদের সেবা করতে পারে আপনাদের কাছে আমার সেই আবেদন থাকলো।
তিনি বিএনপি নেতৃত্ব খালেদা জিয়া তারেক রহমানের স্বরূপ উন্মোচন করে বলেন, লুটেরা বিএনপি যে এতিমের অর্থ আত্মসাৎ করেছে, দুর্নীতি করে সাজাপ্রাপ্ত আসামী, মুচলেকা দিয়ে, আর রাজনীতি করবে না বলে দেশে থেকে পালিয়েছে, অর্থ আত্মসাৎকারি, অস্ত্র চোরাকারবারিএই হলো বিএনপির নেতা। আর জামাতে ইসলামি হলো যুদ্ধাপরাধী। যুদ্ধাপরাধের জন্য শাস্তি পেয়েছে। এরা দেশকে ধ্বংস করে দেবে। এই ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার জন্য একমাত্র নৌকা মার্কাই আপনাদের সবরকমের সহযোগিতা দেবে। তাই, আপনাদের কাছে আমার এই আহ্বান। তাছাড়া, আমি জানি এবারে বৃষ্টি হচ্ছে, বন্যা হচ্ছে, নদী ভাঙ্গনএসব আমাদের জন্য সমস্যা।
তিনি বলেন, নদী ভাঙ্গন থেকে ফরিদপুর এবং শরিয়তপুরসহ বিভিন্ন এলাকাকে রক্ষা করার জন্য ইতোমধ্যে আমরা নদী ভাঙ্গনরোধে প্রকল্প গ্রহণ করেছি এবং তার কিছু কিছু বাস্তবায়নও শুরু করেছি। কাজেই, সারাদেশের মানুষের কল্যাণের জন্যই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
দেশের মানুষের সবধরনের উন্নয়নের জন্য তাঁর সরকার কাজ করে যাচ্ছে,’ উল্লেখ করে  প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের বিনাপয়সায় বই দিচ্ছি, বৃত্তি দিচ্ছি, প্রতি জেলায় স্কুল কলেজ সরকারিকরণ করে দেয়া হচ্ছে। তাই, শিক্ষার্থী সকলকে মনেযোগ দিয়ে পড়াশোনা করতে হবে। তারা শিক্ষাদীক্ষা, জ্ঞানেবিজ্ঞানে উন্নত হয়ে উন্নত বিশে^ সঙ্গে যেন তাল মিলিয়ে চলতে পারে।
তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এই বাংলাদেশ গড়ে উঠবে। আমরা আজকে বয়স্ক ভাতা, বিধবা বা স্বামী পরিত্যক্ততা ভাতা দিচ্ছি, মাতৃত্বকালীন ভাতা দিচ্ছি, মাতৃদুগ্ধ প্রদানকারি কর্মজীবী মহিলাকে ভাতা দেওয়া হচ্ছে, দুস্থ মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা দিচ্ছি, তাদের জন্য বীর নিবাস করে দিচ্ছি, হিজড়া, বেদে, কুষ্ঠরোগী কেউ বাদ যাচ্ছে না। কমিউনিটি ক্লিনিকে ২০ প্রকারের ওষুধ বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে। পাশপাশি মিহীনদের বিনা পয়সায় ঘর করে দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের জীবনজীবিকার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের দেশে একটি মানুষও ভূমিহীন, গৃহহীন, ঠিকানা বিহীন থাকবে না। ইতোমধ্যে লাখ ৪০ হাজার পরিবারকে বিনাপয়সায় ঘর প্রদান করেছি। আর একটি মানুষও বাদ থাকলে তাকে আমরা করে দেব,” বলেন তিনি।
তাঁর সরকার উন্নয়নশীল দেশের কাতারে দেশকে এনেছে যেটি ২০২৬ সাল থেকে কার্যকর হবে, উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এত দিনরাত পরিশ্রম করে এই দেশের এত যে উন্নতি করেছিহাজার হাজার মাইল রাস্তাঘাট, গ্রামে গ্রামে কাঁচা রাস্তা খুব কমই আছে। যা আছে আগামীতে তাও করে দেব, রেল সম্প্রসারণ করছি, নৌপথ নদী ড্রেজিং করে চওড়া করছি, বিমান কিনে নতুন নতুন বিমান পথ চালু করেছি। বাংলাদেশকে সার্বিকভাবে উন্নয়ন করেছি। সারাবিশে^ আজকে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল। কারণ, বাংলাদেশের জনগণ নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় এনেছে বলেই এটা সম্ভব হয়েছে।
জনগণের প্রয়োজনে তাদের পাশে থাকাই আওয়ামী লীগের রাজনীতি উল্লেখ করে তিনি বলেন, কোভিড১৯ মহামারীতে তার দলের নেতাকর্মীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়েও সব ধরনের সহযোগিতা করেছেন। অনেকে সেজন্য জীবনও উৎসর্গ করেছেন।
ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হকের সভাপতিত্বে সাধারণ সম্পাদক শাহ মো. ইশতিয়াক আরিফের সঞ্চালনায় সমাবেশে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন

পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য দীর্ঘ ২১ বছর পর ক্ষমতায় এসে ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করলেও পরবর্তী বিএনপি সরকার তা বন্ধ করে দেয় উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, খালেদা জিয়া এসে বলে এখানে হবে না। আসলে বিএনপিরতো ধ্বংস করাই চরিত্র।
. ইউনুসের নাম উল্লেখ না করে তিনি বলেন, দ্বিতীয় বার সরকারে এসে পদ্মা সেতু করার উদ্যোগ নিলে ব্যাংকের নিয়মমাফিক এমডি পদে থাকতে না পেরে যুক্তরাষ্ট্রের হিলারি ক্লিনটনকে দিয়ে পদ্মাসেতুতে বিশ^ব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধ করে দিয়ে এই প্রকল্পে দুর্নীতি হয়েছে বলে বদনাম দেওয়ার চেষ্টা করলো।
তিনি বলেন, আমি চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলাম দুর্নীতি করতে আসিনি। মানুষের সেবা করতে এসেছি। শেখ মুজিবের মেয়ে কখনো দুর্নীতি করে না। আমি নিজের টাকায় পদ্মা সেতুর নির্মাণের চ্যালেঞ্জ দেই। তখন অনেকেই বলেছিলেন এটা সম্ভব নয়। পদ্মার মত এত খরস্্েরাতা নদীতে বাংলাদেশের টাকায় সেতু বানানো সম্ভব নয়।
স্বাধীনতার পর  যুদ্ধবিধ্বস্থ বাংলাদেশ গড়ে তোলার সময় সদ্য পাকিস্তানী কারাগার থেকে মুক্ত জাতির পিতা বিদেশি সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে সেই যে বলেছিলেন, ‘আমার মাটি আছে, মানুষ আছেতা দিয়েই তিনি দেশকে গড়ে তুলবেন,’ সে কথার উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, তিনি সে কথা মাথায় রেখে জাতির পিতার আদর্শ বুকে নিয়েই নিজস্ব অর্থে পদ্মাসেতু করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। যদিও জানতেন জ্ঞানীগুণী অনেকেই তাঁর সঙ্গে নেই, কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ তাঁর সঙ্গে রয়েছে
শেখ হাসিনা বলেন, “অনেক ষড়যন্ত্র, অনেক চক্রান্ত কিন্তু আমার একমাত্র ভরসা বাংলাদেশের মানুষ।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ পাশে থাকলে যে অসাধ্য সাধন করা যায় সেটাই আমরা প্রমাণ করেছি পদ্মা সেতু নির্মাণের মধ্যদিয়ে। আজকে যেখানে রেল সেতুও আমরা চালু করলাম।
জাতির পিতার মার্চের ভাষণেকেউ আমাদের দাবায়ে রাখতে পারবা না উল্লেখ করে তিনি বলেন, কাজেই বাংলাদেশের মানুষকে আর কেউ দাবিয়ে রাখতে পারবে না।
সময় তাঁর সরকার বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক চেতনায় গড়ে তুলতে চায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাঁর সরকার সারাদেশে ৫৬০টি মডেল মসজিদ এবং ইসলামী সংস্কৃতি কেন্দ্র করছে। কারণ, আমাদের ধর্মটা সম্পর্কে মানুষ যাতে সঠিকভাবে জানতে পারে। কেননা এইদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে হিন্দুমুসলমানবৌদ্ধখ্রীষ্টান এক হয়ে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে এদেশ স্বাধীন করেছে। কাজেই, সবধর্মের সব মানুষ এদেশে ধর্মীয় স্বাধীনতা ভোগ করবে এবং স্বাধীনভাবে ধর্মকর্ম করবে।
তিনি পবিত্র কোরআন শরিফের সুরা কাফিরুন এরলাকুম দিনুকুম ওয়ালিয়াদীন,’  উদ্ধৃত করে বলেন, যার যার ধর্ম সে সে পালন করবে। আমরা তাদের সহযোগিতা করবো এবং সেটাতেই আমরা বিশ^াস করি। অন্যদিকে বিএনপি ক্ষমতায় এসে দেশের অন্য ধর্মাবলম্বীদের ওপর অত্যাচারনির্যাতন করেছে, মানুষ হত্যা করেছে, মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও এর নির্মম শিকার হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর বাবামাভাই স্বজনদের কেউ বেঁচে নেই। আছে বাংলাদেশের জনগণ। তাদের জন্যই তাঁর কাজ। জিয়াএরশাদখালেদা লুটপাট আর দুর্নীতিতে মত্ত ছিলেন। কেউ ভোট দিতে পারেনি। লুট করেছে তারা। আমরা সরকারে এসে সব ধরনের সেবা নিশ্চিত করেছি। কমিউনিটি ক্লিনিক, স্কুল কলেজ, রাস্তাঘাট করে দিয়েছি।
তিনি বলেন, মিলিটারি ডিক্টেটরের আমলে কেউ ভোট দিতে পারতো না। তখন তো কথাই ছিল, ১০টা হোন্ডা ২০টা গুন্ডা নির্বাচন ঠান্ডা।
শেখ হাসিনা বলেন, ফরিদপুর পুরোনো শহর, কিন্তু সব সময় অবহেলিত ছিল। আমরা এসে উন্নয়ন করেছি। ফরিদপুরের মেডিকেল কলেজ সম্প্রসারিত সেবার আধুনিকায়ন আমরাই করেছি। আমি জানি, ফরিদপুরে বিশ্ববিদ্যালয় নেই। ইনশাআল্লাহ, আবার সরকারে এলে সেটা করবো।
তাঁর সরকার দেশের উন্নয়নঅগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে চায় উল্লেখ করে তিনি দেশের প্রতি ইঞ্চি জমি চাষের আওতায় আনার পাশাপাশি বিদ্যুৎ পানি ব্যবহারে সাশ্রয়ী হবার পরামর্শ পুনর্ব্যক্ত করেন

 

CATEGORIES
Share This

COMMENTS