শনিবার, ১৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

অযত্ন আর অবহেলায় দিনাজপুরের খানসামা ‘আওকরা’ মসজিদ

অযত্ন আর অবহেলায় দিনাজপুরের খানসামা ‘আওকরা’ মসজিদ

মোঃ আফজাল হোসেন, ফুলবাড়ী, দিনাজপুর প্রতিনিধি: অযত্ন আর অবহেলায় দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার মীর্জার মাঠে অবস্থিত ২৫০ বছরের পুরনো স্থাপত্য ‘আওকরা’ মসজিদ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। এটি খানসামা উপজেলার ৬ নং গোয়ালডিহি ইউনিয়ন ও ৩নং আঙ্গারপাড়া ইউনিয়নের মধ্যবর্তীস্থান হাসিমপুর-আংগারপাড়ার মীর্জার মাঠ নামক স্থানে অবস্থিত।তৎকালীন মীর্জা সাহেব মসজিদটি প্রতিষ্ঠার সময় কী নাম রেখেছেন তা কেউ বলতে পারেন না।কোনো মানুষ মসজিদের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় এটির মধ্যবর্তী অংশে দাঁড়িয়ে কথা বললে একসময় জোরে প্রতিধ্বনি সৃষ্টি হতো। তাই শুনে তারা ভাবত মসজিদটি তাদের কথার উত্তর দিচ্ছে। এ থেকে মসজিদের নাম হয়ে যায় ‘আওকরা’ মসজিদ অর্থাৎ কথা বলা মসজিদ।
এখনো মানুষ পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় শব্দ করে কথা বলে প্রতিধ্বনি শোনার আশায়। কিন্তু মসজিদের দেয়াল ফেটে নষ্ট এবং এর গায়ে আগাছা পরিপূর্ণ হওয়ায় আগের মতো আর আওয়াজ হয় না। এটি অযতœ আর অবহেলায় দীর্ঘকাল সংস্কারের অভাবে ধীরে ধীরে বিলীনের পথে। অথচ এটিকে সংস্কার করলে এটাও পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে পারে। উপজেলা পরিসংখ্যানের তথ্যে পাওয়া গেছে, এ মসজিদটি প্রায় ২৫০ বছর আগে বাংলা ১১৭২ সালে মীর্জা লাল বেগ নির্মাণ করেন। চিকন ইটে নির্মিত দেয়ালে নকশা করা মসজিদটি উপজেলার মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া বেলান নদীর পূর্ব ধারে মীর্জার মাঠ নামক স্থানে অবস্থিত।

ওই এলাকার প্রবীণ ব্যক্তিরা ধারণা করেন, একসময় মসজিদটির আশপাশে মুসলিম জনবসতি ছিল। যে কারণে এখানে মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছিল এবং ব্রিটিশ সরকারের আমলে অথবা অন্য কোনো কারণে তারা মসজিদটির আশপাশ এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে যান। ফলে এটি অযন্ত অবহেলায় পরিত্যক্ত অবস্থায় দীর্ঘকাল পড়ে থাকে। পরবর্তীতে সংস্কারের অভাবে ধীরে ধীরে ধ্বংস হতে থাকে মসজিদটি। তবে মীর্জা লাল বেগের ওই মসজিদকে ঘিরে মীর্জার মাঠে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। যা পরে সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। এ ছাড়াও একই স্থানে এলাকাবাসীর উদ্যোগে মীর্জার মাঠ আওকরা মসজিদ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় নামে আরও একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হয়।

ওই এলাকার একাধিক প্রবীণ মানুষের সঙ্গে আলোচনা করেও মসজিদটিতে সর্বশেষ কত সালে নামাজ আদায় হয়েছে তা তারা জানেন না।তবে মীর্জা লাল বেগের ওই মাঠে উজ্জ্বলময় দুটি প্রতিষ্ঠান থাকলেও উপজেলার একমাত্র পুরাকীর্তি ও ঐতিহাসিক আওকরা মসজিদটির প্রতি সরকারি বেসরকারি কোন প্রতিষ্ঠান কিংবা ধর্মভীর মুসলিম বিত্তশালীরা কেউই এটির প্রতি দৃষ্টিপাত করছেন না। ফলে মসজিদটির যে টুকু অংশ এখনও অবশিষ্ট রয়েছে তাও ধ্বংশ হয়ে যাচ্ছে।এলাকাবাসীর দাবি, প্রত্নতত্ব বিভাগ কিংবা সরকারি কোনো বিভাগ যদি পদক্ষেপ নিয়ে মসজিদটির সংস্কার করে তাহলে এটি হতে পারে দেশের অন্যতম দর্শনীয় স্থান।
মসজিদের ইমাম মাওলানা হাসান আলী জানান, ঐতিহাসিক এ মসজিদটি দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত ছিল। পরে স্থানীয়দের উদ্যোগে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করে নামাজ আদায় করা শুরু করেছি আমরা। সরকার দ্রæত মসজিটি সংস্কার করলে আমার ঝুঁকিমুক্ত হয়ে নামাজ আদায় করতে পারতাম।

CATEGORIES
Share This