
বিরামপুর রিসোর্স সেন্টারে ইন্সট্রাক্টর ৮ বছর ধরে একই কার্যালয়ে কর্মকর্তা ! তার খুঁটির জোর কোথায়?

স্টাফ রিপোর্টার : বিরামপুর উপজেলা রিসোর্স সেন্টার এর ইন্সট্রাক্টার আজমল হোসেন দীর্ঘ ৮ বছর যাবত একই স্থলে দায়িত্বরত কর্মকর্তা। নেই বদলি! বহাল তাবিয়তে নিজের খেয়ালখুশি মতো চালিয়ে যাচ্ছেন রিসোর্স সেন্টারের বিভিন্ন অনিয়ম এর কার্যক্রম। রিসার্চ সেন্টারটিকে নিজের বাড়ি বানিয়ে ফেলেছেন। বিরামপুর রিসোর্ট সেন্টারে ৮ বছর ধরে কর্মরত থাকায় শিক্ষকেরা বিভিন্নভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। তার কাছে তদবির করলেই মিলে প্রশিক্ষণ, না করলে শিক্ষকদের ভাগ্যে প্রশিক্ষণ মেলেনা।
প্রশিক্ষণ বাণিজ্যে শিক্ষকদের কাছে থেকে বিন্দু বিন্দু করে সমন্বিত ভাবে হাতিয়ে নিচ্ছেন লক্ষ লক্ষ টাকা। অভিযোগ উঠেছে, বিভিন্ন প্রশিক্ষণে শিক্ষকদের বরাদ্দ থেকে নিম্নমানের খাবার প্রদান, নিম্নমানের উপকরণ প্রদান নিজেই কেনাকাটাতে ব্যস্ত থাকেন ইন্সপেক্টর আজমল হোসেন। শিক্ষকের বরাদ্দকৃত প্রশিক্ষণে সম্মানী ভাতার খরচ বাবদ টাকা না দিলে সম্মানি ভাতা দিতে তালবাহানা করেন ওই কর্মকর্তা! প্রশিক্ষণে শিক্ষকদের সম্মানী ভাতা থেকেও খরচ বাবদ আগেই থেকেই প্রশিক্ষনাথী শিক্ষকদের দিতে হয় ১/২ শত টাকা, না দিলে তাদের সম্মানি দিতে তালবাহানা করেন বলে ও নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক অনেক শিক্ষকের অভিযোগে প্রকাশ। দীর্ঘ ৮ বছর যাবত বিরামপুর রিসোর্ট সেন্টারে দায়িত্বরত ইন্সপেক্টর আজমল হোসেন কোন কিছুই তিনি তোয়াক্কা করেন না। রিসোর্স সেন্টারে বিভিন্ন অনিয়ম চালিয়ে যাচ্ছেন দেখার জন্য কেউ নেই। প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার কর্তৃক প্রশিক্ষণ গ্রহণকারী শিক্ষকদের নাম প্রদান করলে রিসোর্স সেন্টারের ঐ কর্মকর্তা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের চূড়ান্ত লিস্টের নাম বাদ দিয়ে তার পছন্দমত শিক্ষকদের ডেকে এনে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে দেন। সিনিয়র-জুনিয়র শিক্ষকের তোয়াক্কা নেই তার কাছে। শিক্ষকদের জিম্মি করে ফেলেছে অভিযুক্ত আজমল হোসেন। শিক্ষকরা ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না বলেও নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক অনেক শিক্ষক অভিযোগ করেন।

বিরামপুরে অনেক জায়গা জমির মালিক তিনি। বিরামপুর পৌর শহরের থানা রোড সংলগ্ন লিচু বাগান এলাকায়( প্রায় ) এক কোটি টাকার জমি কিনেছেন রিসোর্স সেন্টারের কর্মকর্তা আজমল হোসেন। সরকারি নীতিমালা বিধান অনুযায়ী কোন কর্মকর্তা নিজ উপজেলায় চাকরি করতে পারবেন না কিন্তু বিরামপুর উপজেলার স্থায়ীভাবে উক্ত ইন্সপেক্টর আজমাল হোসেন বাড়ি করে বসবাস করছেন। তার শ্বশুরবাড়ি বিরামপুরে হবার কারণে তার স্ত্রীকে বিরামপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করান। তার ইচ্ছামত তার স্ত্রী স্কুলে যাতায়াত করে প্রধান শিক্ষক তার ভয়ে কথা বলতে পারেন না বলেও সূত্রে জানা যায়।
অন্য একটি সূত্রে জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি (পিইডিপি) এর আওতায় একিভূতকরণের কৌশল শিখন শেখানো এবং মূল্যায়ন ৫ দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ চলমান এই প্রশিক্ষনে বিরামপুর প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার কর্তৃক শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য (ইউআরসিতে) প্রশিক্ষণের জন্য তালিকা প্রদান করা হলেও প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের চূড়ান্ত তালিকা কে তোয়াক্কা না করে নিজের খেয়াল খুশিমতো যে শিক্ষক তার সাথে সাক্ষাৎ কিংবা তদবির করবে তাকে পাইয়া দেওয়া হয় প্রশিক্ষণ।প্রশিক্ষণের তালিকাভুক্ত চিঠিতে নাম থাকলেও নিজের খেয়াল মত নাম কেটে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ব্যাপারে জনৈক শিক্ষকের নাম চূড়ান্ত প্রশিক্ষণে থাকলেও চাকরির বয়স কম অজুহাত দেখিয়ে সেই শিক্ষককে প্রশিক্ষণ থেকে বাদ দেওয়া হয়। একটি সূত্রে জানা যায় ধানঝুড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এর সহকারী শিক্ষক এলিজাবেথ কিস্কু ২০২০ সালে যোগদান করেও জুনিয়র শিক্ষক হয়েও তাকে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে দেন এই ইন্সট্রাক্টর আজমল হোসেন। আর একই সালে যোগদানকৃত শিক্ষককে তার সাথে যোগাযোগ না করার কারণে প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারে প্রশিক্ষণে চূড়ান্ত নাম থাকায় প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে গিয়ে অজুহাত বয়স কম অভিযোগ এনে ওই শিক্ষককে রিসার্চ সেন্টার থেকে বের করে দেন,অভিযোগ ভুক্তভোগী শিক্ষকের।
এ ব্যাপারে বিরামপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি আনোয়ারুল ইসলাম আনোয়ার এর সাথে এই বিষয়ে কথা হলে তিনি জানান, যে শিক্ষককে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া হয়েছে এটি দুঃখজনক। যেহেতু উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মহোদয় তাকে পদায়ন বিরমপুর রিসোর্স সেন্টারে করেছেন যতক্ষণ পর্যন্ত না তিনি বাতিল করবেন ততক্ষণ পর্যন্ত ওই শিক্ষক বহাল থাকবেন। বিষয়টি সাধারণ শিক্ষকদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।
সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রশিদ মামুন বলেন, শিক্ষককে প্রশিক্ষণ সেন্টার থেকে (ইউ আর সি) ইন্সপেক্টর বের করে দেওয়া বিধি মোতাবেক হয়নি। দীর্ঘদিন ওই কর্মকর্তা একই কর্মস্থলে থাকায় তিনি শিক্ষকদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করছেন। তার বিরুদ্ধে অনেক শিক্ষক তাদের কাছে মৌখিক অভিযোগ করেন।
এ ব্যাপারে বিরামপুর উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের ইন্সট্রেক্টর আজমান হোসেনের সাথে কথা হলে তিনি জানান, এক স্টেশনে ৮ বছর কেন ২০ বছর থাকবো লিখে আমার কিছুই করতে পারবেন না। পারলে আমার বিরুদ্ধে লেখেন। এখানে আমি যা করব তাই আইন, তাই সব শিক্ষককে মানতে হবে। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের চেয়ে গ্রেডে আমি এক ধাপ বড়, তার কথা শুনতে হবে এমন কোন কথা নেই। আমি যা করব তাই আইন।
এ ব্যাপারে প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার রুনা লায়লা বেগম এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি দেখবেন, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলেও জানান।
এ ব্যাপারে দিনাজপুরের পিটিআই সুপার ওমর আলীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বিষয়টি শুনলাম প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ ব্যাপারে দিনাজপুর জেলার প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার (ডিপিও) নজরুল ইসলাম এর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, বিষয়টি দুঃখজনক।বিষয়টির ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
৫৫ Views