
ওসাকা এক্সপোতে বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নে বিপুল সংখ্যক দর্শনার্থীর ভিড়

পজিটিভ বিডি নিউজ ২৪ডট কম (ঢাকা): জাপানে ওসাকা এক্সপো নামে পরিচিত ‘ওয়ার্ল্ড এক্সপো-২০২৫’ শুরুর পর থেকেই বাংলাদেশের প্যাভিলিয়নে প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক দর্শনার্থীর সমাগম ঘটছে। এ প্রদর্শনী শৈল্পিক সাজসজ্জা, কাঠের কাঠামো এবং সুন্দর পণ্য নিয়ে দর্শনার্থীদের মন জয় করেছে।
১৭টি জোন ও ছয়টি ক্ষুদ্রাকৃতির অংশ দিয়ে তৈরি প্যাভিলিয়নে দেশের ঐতিহ্য এবং বিভিন্ন শিল্প পণ্য প্রদর্শনের মাধ্যমে কৃষিনির্ভর অর্থনীতিকে শক্তিশালী রপ্তানিমুখী অর্থনীতিতে রূপান্তরের বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। এটি প্রতিদিন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের দর্শনার্থীদের আগমনে একটি সমাবেশে পরিণত হয়।
প্রতিটি জোন পণ্য ও প্রতীক প্রদর্শনের জন্য সাজানোর পাশাপাশি সংক্ষিপ্ত বিবরণ, ডিজিটাল ডিসপ্লে স্ক্রিনিং, অডিও ভিজ্যুয়াল ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। একটি ট্যাবলেট উন্মুক্ত রাখা হয়েছে যাতে দর্শনার্থীরা নিজেরাই এটি ব্যবহার করে সবকিছু আরও ভালোভাবে বুঝতে পারেন। ‘২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থান’-এর উপর একটি জোন স্থাপন করা হয়েছে, যেখানে আন্দোলনের গ্রাফিতি প্রদর্শন করা হচ্ছে।
জাপানে ‘ওয়ার্ল্ড এক্সপো’র বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নে ইলিশের রেসিপি দেখছেন দর্শনার্থীরা।
১৭টি ডিজিটাল ডিসপ্লে ইউনিটসহ একটি এলসিডি বড় স্ক্রিন রয়েছে। তথ্য প্রদানকারীরা প্রদর্শনীতে বাংলার গৌরবময় অতীত, জনগণের সমৃদ্ধ সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য, ভূপ্রকৃতির স্বতন্ত্রতা এবং ভবিষ্যতের সমৃদ্ধ ভবিষ্যত সম্পর্কে অবহিত করছেন। এ ছাড়া, ডিজিটাল এবং ভৌত প্রদর্শনীর মাধ্যমে বিনিয়োগের সুযোগ তুলে ধরা হচ্ছে।
আজ সকাল থেকেই, দর্শনার্থীদের তাদের বন্ধুবান্ধব ও পরিবারের সদস্যদের সাথে নিয়ে প্যাভিলিয়নে আসতে দেখা গেছে। তাদেরকে প্রদর্শিত পণ্য, গ্রাফিতি ও বর্ণনার ছবি তুলতে, প্যাভিলিয়নের কর্মীদের বিভিন্ন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে এবং নিজেরাই ট্যাবলেট ব্যবহার করে ডিজিটাল বিষয়বস্তু পড়তে দেখা গেছে।
বাসস-এর সাথে কথা বলার সময়, দর্শনার্থীরা প্যাভিলিয়নের সাজসজ্জা, বিশেষ করে কাঠের কাঠামো, হস্তশিল্প ও পাটজাত পণ্যের নকশা ও রঙের প্রশংসা করে বাংলাদেশ সম্পর্কে তাদের উৎসাহ ও কৌতূহল প্রকাশ করেছেন।
জাপানে ‘ওয়ার্ল্ড এক্সপো’র বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নে বাংলাদেশের সংস্কৃতি সম্পর্কে জানছেন দর্শনার্থীরা।
লিথুয়ানিয়া থেকে আগত একজন গাইড লেভা নিসিউলিয়েন বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নের কাঠের কাঠামোর প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, তিনি বাংলাদেশের ছয়টি ঋতু এবং গত বছর (২০২৪) সংঘটিত বিপ্লব সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।
তিনি বলেন, ‘এখানে আমার কাছে যা সবচেয়ে বেশি পছন্দ হয়েছে; তা হল মাঝখানের কাঠের কাঠামো। আপনাদের খাবার প্রদর্শনও আমি উপভোগ করেছি। বাংলাদেশ সম্পর্কে আমি যা জানি তা হল এটি একটি অত্যন্ত জনবহুল দেশ। আজ, আমি আরও অনেক কিছু শিখেছি। আমি আপনাদের দেশের ছয়টি ঋতু সম্পর্কে জানতে পেরেছি যা আমি পূর্বে জানতাম না এবং এটি আমার জন্য খুবই নতুন।’
জাপানে ‘ওয়ার্ল্ড এক্সপো’র বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নের সামনের অংশ ।
হস্তশিল্প ও পাটজাত পণ্য অঞ্চল পরিদর্শনের পর, হিয়োগো থেকে এক্সপোতে আগত কোম্পানির কর্মচারী ৩৭ বছর বয়সী সেইতারো বলেন, ‘বাংলাদেশ প্যাভিলিয়ন পরিদর্শন করতে পেরে আমার খুব ভালো লাগছে, কারণ আমার বন্ধুরা বাংলাদেশ থেকে এসেছে। আমি আগে বাংলাদেশের চামড়াজাত পণ্য সম্পর্কে শুনেছিলাম। আজ, এখানে পাটজাত পণ্য ও হস্তশিল্পের নকশা ও রঙ আমার সবচেয়ে বেশি পছন্দ হয়েছে।’
বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নের কর্মী মো. শাজেবুর রহমান বলেন, দর্শনার্থীরা বাংলাদেশ সম্পর্কে জানার জন্য ব্যাপক আগ্রহ দেখাচ্ছেন। তারা বাংলাদেশের মানুষ, পর্যটন কেন্দ্র, খাবার, সংস্কৃতি ও ঋতু সম্পর্কে অসংখ্য প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করছেন। প্যাভিলিয়নে প্রদর্শিত বিভিন্ন পণ্য এবং সম্ভাব্য বিনিয়োগের সুযোগ সম্পর্কে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে যথেষ্ট আগ্রহ লক্ষ্য করা গেছে।
জাপানে ‘ওয়ার্ল্ড এক্সপো’র বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নে পাটের তৈরি পণ্য দেখছেন দর্শনার্থীরা। ছবি : বাসস
তিনি আরও বলেন, ‘প্রথম দিন থেকেই বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নের প্রতি মানুষের আগ্রহ ছিল। কারণ গত বছরের জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের পর সারাবিশ্বে প্রচারিত হয়েছে যে, আমরা একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলছি।’
‘১৯৫২-১৯৭১-২০২৪ : অদম্য যুব চেতনা’, ‘সংস্কৃতি ও উৎসব’, ‘পৃথিবীর বৃহত্তম ব-দ্বীপ’, ‘নদী ও উর্বরতার ভূমি’, ‘মসলিন : বাংলাদেশের বোনা ঐতিহ্য’ এবং ‘বাংলাদেশের শিল্প অগ্রগতি’ শিরোনামে ক্ষুদ্রাকৃতিতে ছয়টি দৃশ্যের ত্রিমাত্রিক উপস্থাপনার মাধ্যমে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ও উত্থান, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য এবং বিনিয়োগের সম্ভাবনা বিশ্বের কাছে উপস্থাপন করা হয়েছে।
জাপানে ‘ওয়ার্ল্ড এক্সপো’র বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নে গান শুনছেন দর্শনার্থীরা। ছবি : বাসস
প্যাভিলিয়নের কর্মকর্তারা জানান, জুলাই বিদ্রোহের গ্রাফিতি, পাটজাত পণ্য, পরিবেশবান্ধব হস্তশিল্প, চামড়াজাত পণ্য, গ্রামীণ জীবন ও ঐতিহ্যবাহী উৎসবের চিত্রকর্ম এবং ক্ষুদ্রাকৃতির ছবি প্যাভিলিয়নে দর্শনার্থীদের আগ্রহের শীর্ষে ছিল। অন্যদিকে, বিনিয়োগকারীরা দেশের স্বাস্থ্যখাত, ওষুধ শিল্প, তৈরি পোশাক শিল্প, অটোমোবাইল, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও পাট শিল্পের প্রতি আগ্রহ দেখিয়েছেন।
দেশের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য তুলে ধরার পাশাপাশি, প্যাভিলিয়নে নকশি কাঁথা, জামদানি বয়ন ও মসলিন, পাটজাত পণ্য, চামড়াজাত পণ্য, তৈরি পোশাক শিল্প, ক্রমবিকাশমান ওষুধখাত, বিভিন্ন কৃষি পণ্যের পাশাপাশি দেশের ক্রমবর্ধমান শিল্পভিত্তির মতো ঐতিহ্যবাহী হস্তশিল্প প্রদর্শন করা হয়েছে।
জাপানে ‘ওয়ার্ল্ড এক্সপো ২০২৫ শে দর্শনার্থীরা।
প্যাভিলিয়নে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি তুলে ধরার পাশাপাশি একটি আইটি হাব হিসেবে এর উত্থান, যুব-নেতৃত্বাধীন ডিজিটাল রূপান্তর ও সমৃদ্ধ ফ্রিল্যান্সিং খাতকে তুলে ধরা হয়েছে যা দর্শনার্থীদের বাংলাদেশের সমৃদ্ধ ইতিহাস, গতিশীল বর্তমান ও একটি টেকসই ভবিষ্যতের জন্য দূরদর্শী দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে একটি ব্যাপক ধারণা প্রদান করে।
বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নের প্রদর্শনীর শিরোনাম, সংযোগকারী জীবন : ঐতিহ্য ও উদ্ভাবনের একটি সিম্ফনি’।
জাপানে ‘ওয়ার্ল্ড এক্সপো’র বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নে দর্শনার্থীদের ভিড়।
২০২৫ সালের ওসাকা-কানসাই এক্সপো গত রোববার ওসাকা উপসাগরের ইউমেশিমা কৃত্রিম দ্বীপে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। ‘আমাদের জীবনের জন্য ভবিষ্যত সমাজ গঠন’ থিম নিয়ে ১৫৮টি দেশ ও কয়েকটি অঞ্চল এই এক্সপোতে অংশগ্রহণ করছে, যা ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত চলবে।
জাতীয় ব্র্যান্ডিংয়ের একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ১৮৫১ সাল থেকে ওয়ার্ল্ড এক্সপোজিশন (সংক্ষেপে ‘এক্সপো’) সারা বিশ্বেও বিভিন্ন দেশ প্যাভিলিয়নের মাধ্যমে তাদের উদ্ভাবন, প্রযুক্তিগত, স্থাপত্য ও সাংস্কৃতিক অগ্রগতি প্রদর্শন করে আসছে।
৩০ Views