সোমবার, ২১শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে গত ১ বছরে ৭২ দুর্ঘটনায় নিহত ৫১, আহত শতাধিক

ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে গত ১ বছরে ৭২ দুর্ঘটনায় নিহত ৫১, আহত শতাধিক

পজিটিভ বিডি নিউজ ২৪ডট কম (মুন্সীগঞ্জ): ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে গত ১ বছরে ৭২টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৫১ জন নিহত ও শতাধিক আহত হয়েছেন। গত ১৫ দিনেই ৪টি দুর্ঘটনায় একই পরিবারের ৪ জনসহ ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে।

শ্রীনগর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপ-পরিচালক দেওয়ান আজাদ হোসেন বলেন, ‘৪ জানুয়ারি পর্যন্ত গত এক বছরে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে ৭২টি সড়ক দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলে ও বিভিন্ন হাসপাতালে ৫১ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। এ সময়ে সড়ক দুর্ঘটনায় শতাধিক ব্যক্তি আহত হন।’

বিশেষজ্ঞদের মতে, সর্বোচ্চ গতিসীমার নির্দেশনা না মানা, বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো, ওভারটেক করা, ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলাচল, অদক্ষ ও লাইসেন্সবিহীন চালক, হাইওয়ে পুলিশের দায়িত্বহীনতাসহ এক্সপ্রেসওয়েতে গাড়ি চালানোর দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা না থাকায় এসব দুর্ঘটনা ঘটছে। এছাড়া বৈরী আবহাওয়ায় কিংবা ঘন কুয়াশার সময় যানবাহন চলাচলে সতর্ক না হওয়াও এসব দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। ফলে একের পর এক ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটছে। রাস্তায়  মৃত্যুর মিছিল যেন থামছেই না।

দেওয়ান আজাদ হোসেন জানান, সার্ভিস লেনে গাড়ি চলাচলের জন্য সড়ক বিভাগ গতিসীমা নির্ধারণ করে দিয়েছে। স্বাভাবিকভাবে এক্সপ্রেসওয়েতে কার, বাস, মিনিবাস ও মাইক্রোবাসের সর্ব্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার, ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান ও মিনি ট্রাকসহ সকল মালবাহী যানের সর্বোচ্চ গতিসীমা ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার এবং মোটরসাইকেলের সর্বোচ্চ গতিসীমা ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু দূরপাল্লার যাত্রীবাহী বাস ও ট্রাকের চালকরা এ নীতিমালা মানছে না।

তিনি আরো জানান, পুলিশ বিভিন্ন স্থানে চেকপোষ্ট বসিয়ে, মাইকিং করে ও লিফলেট বিতরণ করেও ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নতিতে সফল হচ্ছে না। গাড়ির চালক পুলিশের সামনে গতি কমালেও, পরে আবার গতি বাড়িয়ে দেয়। পুলিশের স্পিড গানে দেখা যায়, যাত্রীবাহী বাস ট্রাকের গতি ৮০ থেকে ১০০ কিলোমিটার থাকে। বৈরী আবহাওয়ায় কিংবা ঘন কুয়াশার সময় যানবাহন চলাচল বন্ধ বা গতি নিয়ন্ত্রণ সীমার মধ্যে রেখে চলাচল করতে বলা হলেও তা মানা হচ্ছে না।

তিনি বলেন, গাড়ি চলাচলের নিয়ম বেঁধে দেওয়া স্বত্বেও ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে যেন মৃত্যুকূপে পরিণত হয়েছে। দুর্ঘটনা রোধে ও সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে সরকারি কোনো পদক্ষেপই কাজে আসছে না।

২০২০ সালের মার্চ মাসে সার্ভিস লেনসহ আট লেনের ২৯.২ কিলোমিটার দীর্ঘ ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে চালু হয়। পদ্মাসেতু উদ্বোধনের পর যানবাহনের জন্য খুলে দিলে প্রথম কয়েকদিনেই প্রাণ যায় ৩ মোটরসাইকেল আরোহীর। পরে মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয় ।

সহজ ও নিরাপদ সড়ক যাতায়াত নিশ্চিত করতে আট লেনের এক্সপ্রেসওয়েটি নির্মিত হলেও এখানে শুরু থেকেই যানবাহনের বেপরোয়া গতির কারণে একের পর এক সড়ক দুর্ঘটনায় যাত্রীদের প্রাণ ঝরছে।

হাসাড়া হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল কাদির জিলানি বলেন, ঘন কুয়াশার কারণে গত ১৫ দিনে ৪টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১২ জনের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে গত ২৭ ডিসেম্বর ধলেশ্বরী টোল প্লাজায় একাধিক গাড়ির পরপর পিছন দিক থেকে ধাক্কায় একই পরিবারের ৪ জনসহ ৬ জনের মৃত্যু হয়। গত ৩ জানুয়ারি দুইটি পৃথক দুর্ঘটনায় ৪ জনের প্রাণহানি ঘটে।

তিনি আরো জানান, গাড়ির চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স ফটোকপি থাকায় তা পরীক্ষা করতে অনেক সময় লাগে। ফলে রাস্তার সব গাড়ি চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স পরীক্ষা করা যায় না। বিআরটিএ দ্রুততম সময়ের মধ্যে চালককে নবায়নসহ মূল লাইসেন্স ফেরত দিলে লাইসেন্স পরীক্ষা করা সহজ হবে। টোল আদায়ের সময় গাড়ির ফিটনেস সার্টিফিকেট ও চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্সসহ অন্যান্য কাগজপত্র পরীক্ষা করলে গাড়ীর চালক এবং মালিক সচেতন হবে। ট্রাফিক আইন অমান্য কারীদের বিরুদ্ধে গত এক বছরে ৪ শতাধিক মামলা হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, হাইওয়েতে পর্যাপ্ত আলো নেই। রাস্তার অনেক লাইট নষ্ট। পথচারীরা ইচ্ছেমতো রাস্তা পার হচ্ছে। যত্রতত্র গাড়ি থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা করছে।

কর্তব্যরত হাইওয়ে পুলিশের সাথে কথা বলে জানা যায়, টোল প্লাজায় সড়ক ও জনপথ বিভাগের সিসি ক্যামেরা থাকলেও পুলিশ এ ক্যামেরার সুবিধা নিতে পারছে না। হাইওয়ে পুলিশ রাস্তায় সিসি ক্যামেরা ব্যবহার করতে পারলে, কোন গাড়ি ট্রাফিক আইন অমান্য করলে সাথে সাথে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে পরবর্তী পুলিশ স্টেশনে তথ্য পাঠিয়ে গাড়ি আটকানো যাবে। এতে রাস্তায় শৃঙ্খলা অনেকটা ফিরে আসবে ও দুর্ঘটনা কমে যাবে। হাইওয়ে পুলিশ চলচলকারী যানবাহন স্বল্পতার কারণেও তারা যথাযথ দায়িত্ব পালন করতে পারে না।

সিরাজদিখান থানার হাইওয়ে সংলগ্ন এলাকার কুসুমপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমান প্রায়ই এসব দুর্ঘটনা প্রত্যক্ষ করেন। বাসসের সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, গত এক বছরে হাইওয়েতে প্রাণ ঝরার প্রধান কারণ চালকের অদক্ষতা, অনভিজ্ঞতা ও দায়িত্বহীনতা। অদক্ষ চালকরা এক্সপ্রেসওয়েতে গাড়ি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে না। ফলে প্রায়ই ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটছে।

তিনি ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে দুর্ঘটনা রোধে দ্রুতগতির গাড়ি ও ট্রাফিক আইন অমান্যকারীকে সনাক্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে রাস্তার বিভিন্ন স্থানে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের পাশাপাশি পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আরো দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করার আহ্বান জানান।

৬১ Views
CATEGORIES
Share This

COMMENTS