সোমবার, ৯ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

জাতিসংঘ মহাসাগর সম্মেলনে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে অর্থ, খনন ও সমুদ্র সংরক্ষণ এলাকা

জাতিসংঘ মহাসাগর সম্মেলনে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে অর্থ, খনন ও সমুদ্র সংরক্ষণ এলাকা

পজিটিভ বিডি নিউজ ২৪ডট কম  (ঢাকা): বিশ্বের সমুদ্র এখন এক গভীর সংকটে একেজরুরি অবস্থাবলছে জাতিসংঘ সেই সংকট মোকাবিলায় ফ্রান্সে শুরু হচ্ছে বহুল প্রতীক্ষিত জাতিসংঘ মহাসাগর সম্মেলন 

আগামী কাল সোমবার নিস শহরে শুরু হওয়া এই সম্মেলনে বিশ্বের নেতাদের সামনে বড় চ্যালেঞ্জর এবার কি কেবল কথার খই ফোটানো হবে, নাকি সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য রক্ষায় আসবে দৃশ্যমান অগ্রগতি?

ফ্রান্সের নিস থেকে এএফপি এই তথ্য জানায়

সংরক্ষিত সামুদ্রিক এলাকা

সম্ভাবনা আছে কয়েকটি দেশ এবার নতুন সামুদ্রিক সংরক্ষণ এলাকা ঘোষণা করবে। তবে বাস্তবে কতটা সুরক্ষিত থাকবে সেসব এলাকা, সেটি নিয়ে থাকছে নানা প্রশ্ন

অনেক দেশেই এইসংরক্ষিতঅঞ্চলে কী নিষিদ্ধ আর কী অনুমোদিত, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো নীতিমালা নেই। যেমনফ্রান্সসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের অনেক দেশই সংরক্ষিত এলাকাতেও বটম ট্রলিং নামক সমুদ্রতলের ধ্বংসাত্মক মাছ ধরার পদ্ধতিকে অনুমোদন দেয়

ফলে বাস্তবে মাত্র শতাংশ সমুদ্র অঞ্চলই প্রকৃত অর্থে শোষণমুক্ত বলে ধরা যায়। অথচ বৈশ্বিক লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে ৩০ শতাংশ মহাসাগর সুরক্ষিত করা

উন্মুক্ত সমুদ্র চুক্তির বাস্তবায়ন

এই লক্ষ্যে পৌঁছাতে হলে জরুরি হয়ে পড়েছে উন্মুক্ত সমুদ্র সুরক্ষা চুক্তি কার্যকর করা। গত ২০২৩ সালে স্বাক্ষরিত এই ঐতিহাসিক চুক্তি এখনো বাস্তব রূপ পায়নি, কারণ কার্যকর করতে প্রয়োজন ৬০টি দেশের অনুমোদন

ফ্রান্স সম্মেলনকে সাফল্য হিসেবে দেখাতে চেয়েছিল এই সংখ্যাটা পূরণ করে। কিন্তু সম্মেলনের আগে পর্যন্ত সংখ্যাটা অর্ধেকের কাছাকাছি থেমে আছে। বাকি দেশগুলোর কাছে এখন প্রশ্ন তারা কবে অনুমোদন দেবে?

অজানা গভীরে খনন

সমুদ্রতলের খনিজ সম্পদ আহরণ নিয়ে উদ্বেগ বহুদিনের। ইতোমধ্যে ৩৩টি দেশ গভীর সমুদ্র খননে সাময়িক স্থগিতাদেশ চায়। ফ্রান্স এবার সম্মেলনে সেই সংখ্যা বাড়াতে চায়

এটি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের জন্য কড়া বার্তা হতে পারে। কারণ, তিনি আন্তর্জাতিক জলসীমায় খননের পক্ষে জোরালো অবস্থান নিয়েছেন যেখানে জীববৈচিত্র্য পরিবেশগত প্রভাব নিয়ে এখনও পর্যাপ্ত গবেষণা হয়নি

এটি আরো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে আন্তর্জাতিক সমুদ্রতল কর্তৃপক্ষ (আইএসএ)-এর আগামী জুলাইয়ের বৈঠকে, যেখানে গভীর সমুদ্র খননের আন্তর্জাতিক নীতিমালা চূড়ান্ত হওয়ার কথা রয়েছে

শুধু কথা নয়, চাই বাস্তব পদক্ষেপ

সম্মেলন শেষে অংশগ্রহণকারী দেশগুলো একটি রাজনৈতিক ঘোষণাপত্র গৃহীত করবে, যেখানে সমুদ্র সংকটের গুরুত্ব সুরক্ষার প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করা হবে

তবে অনেকেই বলছেন আট পৃষ্ঠার এই ঘোষণাপত্রের ভাষা দুর্বল। কোথাও জ্বালানি খাতের দায় স্পষ্ট করে তোলা হয়নি

তবু, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সম্মেলনের প্রকৃত মূল্যায়ন হবে দেশগুলো যেসব স্বতন্ত্র প্রতিশ্রুতি নিয়ে এসেছে, তার ওপর

নরওয়ের মেরিন রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নীতি নির্ধারক পিটার হাউগান বলেন, ‘ঘোষণাপত্র যতটা না গুরুত্বপূর্ণ, তারচেয়ে বেশি গুরুত্ব বহন করে দেশগুলোর ব্যক্তিগত প্রতিশ্রুতি পদক্ষেপ।

অর্থই বড় প্রশ্ন

এই সম্মেলন কোনো জলবায়ু সম্মেলন বা আইনগত বাধ্যবাধকতা সম্পন্ন চুক্তির আলোচনার জায়গা নয়। ফলে সম্মেলনে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো বাধ্যতামূলক নয়

তবু প্রত্যাশা রয়ে গেছে সমুদ্র সংরক্ষণে যে বিনিয়োগ ঘাটতি রয়েছে, তা পূরণে দেশগুলো আর্থিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেবে

বিশ্ব প্রকৃতি সংরক্ষণ তহবিল (ডব্লিউডব্লিউএফ) এর পাউলি মেরিম্যান বলেন, ‘আমরা এখনো যে তিনটি বিষয়ে ঘাটতি দেখছি তা হলো, দৃঢ় সংকল্প, পর্যাপ্ত অর্থ বাস্তবায়ন। শুধু সদিচ্ছা নিয়ে নিসে সম্মেলনে আসা যথেষ্ট নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।

Views
CATEGORIES
Share This

COMMENTS