মঙ্গলবার, ৩রা জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

বাংলাদেশের বড় শ্রমবাজার হবে জাপান, বাড়বে সে দেশের বিনিয়োগও : প্রেস সচিব

বাংলাদেশের বড় শ্রমবাজার হবে জাপান, বাড়বে সে দেশের বিনিয়োগও : প্রেস সচিব

পজিটিভ বিডি নিউজ ২৪ডট কম  (ঢাকা): প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সদ্যসমাপ্ত জাপান সফর বাংলাদেশের জন্য একাধিক দিক থেকে তাৎপর্যপূর্ণ অগ্রগতি এনে দিয়েছে বলে মনে করেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

তিনি বলেছেন, এই সফরের মাধ্যমে শুধু বিনিয়োগই নয়, বাংলাদেশি কর্মীদের জাপানে পাঠানোর জন্যও একটি বড় পথ উন্মুক্ত হয়েছে। আগামী পাঁচ বছরে জাপানে এক লাখ বাংলাদেশি কর্মী পাঠানোর বিষয়েও ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে। আগামীতে জাপান বাংলাদেশের জন্য বড় শ্রমবাজারে পরিণত হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

আজ রোববার ঢাকার বাংলাদেশ ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রেস সচিব এ কথা বলেন।

শফিকুল আলম জানান, জাপান সফরে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হয়েছে দেশের অন্যতম বৃহৎ অবকাঠামো প্রকল্প মাতারবাড়ি নিয়ে। তিনি বলেন, ‘মাতারবাড়ি প্রকল্পে জাপান বড় ধরনের বিনিয়োগ করবে। এ প্রকল্পের মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়নে ২৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বৃহৎ অংশ জাপান দেবে। তারা সমুদ্রবন্দর, পাওয়ার প্ল্যান্ট, এলএনজি টার্মিনাল, এবং লজিস্টিক হাব তৈরিতে সহায়তা করবে।’

জাপানের উন্নয়ন সংস্থা জাইকা ইতিমধ্যেই এই প্রকল্পে সক্রিয় রয়েছে। তবে এবার জাপানের বেসরকারি খাতের বিনিয়োগকারীরাও এই বৃহৎ প্রকল্পে অংশ নিতে আগ্রহ দেখিয়েছে। শফিকুল আলম বলেন, ‘জাপানি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়ানোর বিষয়টিও সফরের একটি অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল, এবং এটি অনেকাংশে সফল হয়েছে।’

জাপানের মূল বিনিয়োগ কর্তৃপক্ষ জাপান এক্সটারনাল ট্রেড অর্গানাইজেশন (জেটরো)-র সঙ্গে বাংলাদেশ পক্ষের আলোচনাকে প্রেস সচিব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন,‘জেটরোর সঙ্গে আমাদের বৈঠকে তারা বাংলাদেশে নতুন করে বিনিয়োগের ব্যাপারে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দিয়েছে। বর্তমানে জাপানি বিনিয়োগকারীদের বড় অংশ চীন, ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ডমুখী হলেও বাংলাদেশকে তারা দক্ষিণ এশিয়ার সম্ভাবনাময় গন্তব্য হিসেবে দেখছেন।’

এই সফরের পর জাপানের অনেক বড় বড় কোম্পানি বাংলাদেশে আসবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

প্রেস সচিব বলেন, জাপানে জনশক্তি পাঠানো নিয়ে ইতোমধ্যে উচ্চপর্যায়ের আলোচনা হয়েছে এবং দেশটির সরকার জানিয়েছে, আগামী পাঁচ বছরে তারা ১ লাখ বাংলাদেশি কর্মী নিতে চায়। ‘এই বিষয়টি নিয়ে একটি স্ট্র্যাটেজিক পরিকল্পনা করা হবে যাতে দক্ষ শ্রমিক তৈরি, ভাষা প্রশিক্ষণ এবং প্রাসঙ্গিক টেকনিক্যাল স্কিল উন্নয়নের মাধ্যমে চাহিদা পূরণ করা যায়।’

তিনি আরও বলেন, জাপানের শ্রমবাজারে কাজ করতে গেলে ভাষা ও সংস্কৃতির বাধা বড় সমস্যা হিসেবে দেখা দেয়। এ সমস্যা মোকাবেলায় এখন থেকে বাংলাদেশ সরকার ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহ ভাষা প্রশিক্ষণ ও স্কিল ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম চালু করবে।

জাপানে যেতে ইচ্ছুক বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য দীর্ঘদিন ধরে ভিসা প্রক্রিয়া একটি বড় জটিলতা হিসেবে ছিল। শফিকুল আলম বলেন, ‘ভিসা জটিলতা নিয়ে আলোচনা হয়েছে এবং এই সমস্যা সমাধানে জাপান সরকারের পক্ষ থেকে ইতিবাচক প্রতিশ্রুতি এসেছে।’

বাংলাদেশ ও জাপান সরকারের যৌথ সহযোগিতায় একটি সহজীকৃত ভিসা প্রক্রিয়া চালুর চিন্তা রয়েছে, বিশেষ করে কর্মসংস্থান, ব্যবসা ও শিক্ষা সংক্রান্ত ভিসার ক্ষেত্রে।

শফিকুল আলম বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টার জাপান সফর ছিল কেবল অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক নয়, এটি ছিল কৌশলগত কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদারের একটি প্ল্যাটফর্মও।’ বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যকার ৫০ বছরের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে আরও গভীর করতে এই সফর নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে।’

জাপানের বিভিন্ন মন্ত্রী, ব্যবসায়ী প্রতিনিধি এবং বিনিয়োগকারী গ্রুপের সঙ্গে একাধিক বৈঠকে বাংলাদেশকে একটি উদীয়মান ম্যানুফ্যাকচারিং হাব হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। বিশেষ করে তরুণ জনশক্তি, কম খরচে উৎপাদন, অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।

প্রেস সচিব জানান, এই সফরের ফলোআপ হিসেবে বাংলাদেশ সরকার জাপান ভিত্তিক বিনিয়োগ বাড়াতে একটি ‘জাপান ডেস্ক’ খোলার পরিকল্পনা করছে। এছাড়া জাপানে বাংলাদেশি দূতাবাস এবং দূতাবাসের কমার্শিয়াল উইংকে আরও সক্রিয় করা হবে যাতে আগ্রহী কোম্পানিগুলো প্রয়োজনীয় সহায়তা পায়।

তিনি বলেন, ‘আমরা এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কেবল বিনিয়োগই নয়, বরং রপ্তানি, প্রযুক্তি হস্তান্তর এবং মানবসম্পদ উন্নয়নের মাধ্যমে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে বহুমাত্রিকভাবে সমৃদ্ধ করতে চাই।’

এই সফরের সফলতার পর জাপান-বাংলাদেশ সম্পর্ক আরও শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়াবে বলে আশা প্রকাশ করেন শফিকুল আলম।

Views
CATEGORIES
Share This

COMMENTS