প্রিন্ট এর তারিখঃ এপ্রিল ২৮, ২০২৫, ১০:১৫ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ এপ্রিল ২৭, ২০২৫, ১২:৫৮ অপরাহ্ণ
এ বছর আমের উৎপাদন ও রপ্তানিতে রেকর্ড গড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশ

পজিটিভ বিডি নিউজ ২৪ডট কম (ঢাকা): গ্রীষ্মকালীন সুস্বাদু ফল আমের বাম্পার উৎপাদন ও রপ্তানিতে এ বছর রেকর্ড গড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশ। চলতি মৌসুমে প্রায় ২ লাখ ৫ হাজার ৩৪ হেক্টর জমিতে প্রায় ২৭ লাখ মেট্রিক টন আমের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। অন্যদিকে দেশ থেকে ৫ হাজার মেট্রিক টন আম রপ্তানির আশা প্রকাশ করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
জানা যায়, যুক্তরাজ্য, ইতালি, ফ্রান্স, কানাডাসহ প্রতি বছর অন্তত ৩৮টি দেশে বাংলাদেশের আম রপ্তানি হয়ে থাকে। এবারই প্রথম চীনে আম রপ্তানি হতে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে দু’দেশের সরকারের মধ্যে আম রপ্তানির বিষয়ে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হয়েছে বলে জানা যায়।
এ প্রসঙ্গে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ‘রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন প্রকল্পে’র প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ আরিফুর রহমান বাসস’কে বলেন, আবহাওয়াসহ বিভিন্ন প্রাসঙ্গিক বিষয় ঠিক থাকলে এবার আমের উৎপাদন ভালো হবে। আর প্রায় ৫ হাজার মেট্রিক টন আম বিদেশে রপ্তানির টার্গেট রয়েছে। চীনে আম রপ্তানি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ইতোমধ্যে দু’দেশের মধ্যে এমওইউ স্বাক্ষরিত হয়েছে। এছাড়া চীনে যেকোনো খাদ্যপণ্য রপ্তানি করার ক্ষেত্রে দেশটির জেনারেল অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে অব কাস্টম অব চায়না (জিএসিসি) থেকে নিবন্ধন নিতে হয়। জিএসিসি গত বছরের জুলাইয়ে আম রপ্তানির নিবন্ধন দিয়েছে। এখন চীনের আমদানিকারক, ব্যবসায়ী ও রাষ্ট্রদূত পর্যায়ে বাংলাদেশ থেকে আম রপ্তানির বিভিন্ন পর্যায় যাচাই-বাছাই করছেন। হট ওয়াটার ট্রিটমেন্ট কেলিব্রেশন বা সঠিকতা, প্যাকেজিংসহ অনেক কিছুই যাচাই করছেন তারা।
তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, সব ঠিক থাকলে চীনে আম রপ্তানি দেশের জন্য একটি নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করে দিবে। আগামী জুন থেকেই আশা করা যায় চীনে আম রপ্তানি শুরু হতে পারে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২০২০-২১ অর্থবছরে আমের ফলন হয়েছিল ২ লাখ ২ হাজার ৯৬৮ হেক্টর জমিতে ২৩ লাখ ৫০ হাজার ৪৯৯ মেট্রিক টন। ২০২২-২৩ অর্থ বছরে তা বেড়ে হয় ২৭ লাখ ৭ হাজার ৪৫৯ মেট্রিক টন। গত অর্থ বছর অর্থাৎ ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে ২ লাখ ৫ হাজার ৩৪ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়, আর উৎপাদন হয় ২৫ লাখ ৮ হাজার ৯৭৩ মেট্রিক টন আম।
এদিকে বিগত ৮ বছরে আম রপ্তানির হিসাবে দেখা যায়, ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে আম রপ্তানি হয়েছিল মাত্র ৩০৯ মেট্রিক টন, পাঁচ বছর পর ২০২১-২২ অর্থ বছরে আম রপ্তানি বৃদ্ধি পেয়ে হয় ১৭৫৭ মেট্রিক টন। আর ২০২২-২৩ অর্থ বছরে আরও বৃদ্ধি পেয়ে আম রপ্তানি হয় ৩১ মেট্রিক টন। কিন্তু ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে আম রপ্তানি কমে যায়, রপ্তানি হয় ১৩২১ মেট্রিক টন আম।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, দেশে বিভিন্ন ধরনের আম উৎপাদন হয়। এর মধ্যে কিছু প্রধান জাতের নাম হলো: ফজলি, ল্যাংড়া, গোপালভোগ, হিমসাগর, ক্ষীরশাপাত, আম্রপালি, মল্লিকা, সুবর্ণরেখা, মিশরিদানা, নীলাম্বরি, কালিভোগ, কাঁচামিঠা, আলফানসো, বারোমাসি, তোতাপুরী, কারাবাউ, কেউই সাউই, গোপাল খাস, কেন্ট, সূর্যপূরী, পাহুতান, ত্রিফলা, হাড়িভাঙ্গা, ছাতাপড়া, গুটলি, লখনা, আদাইরা, কলাবতী এবং রুপালি। এছাড়াও বারি আম-১ থেকে বারি আম-৯ পর্যন্ত উন্নত জাতের আমও উৎপাদিত হয়।
দেশে আম উৎপাদন ও রপ্তানি প্রসঙ্গে ‘রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন প্রকল্পে’র অতিরিক্ত উপ-পরিচালক সাজ্জাদ হোসেন মজুমদারের সঙ্গে বাসস প্রতিনিধির কথা হয়। তিনি জানান, রাজশাহী, নওগাঁ, সাতক্ষীরা, চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ দেশের ১৫টি জেলায় সবচেয়ে বেশি আম উৎপাদন হয়। এবার আম উৎপাদন ও রপ্তানির টার্গেট আগের বছরের তুলনায় বেশি। আবহাওয়া ঠিক থাকলে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। আগামী ৫ মে থেকে সাতক্ষীরার গোপালভোগ আমের মাধ্যমে দেশে আমের ফলন শুরু হবে। অন্যদিকে আম রপ্তানি সম্পর্কে তিনি জানান, গত বছর ২১টি দেশে ১৩২১ মেট্রিক টন আম রপ্তানি হয়েছিল। এবার নতুন করে চীনে আম রপ্তানির ব্যাপারে সরকার আশাবাদী। ইতোমধ্যে চীনের ব্যবসায়িক প্রতিনিধি দল সর্বোচ্চ আম উৎপাদনকারী এলাকা পরিদর্শন করেছেন বলেও তিনি জানান।
উল্লেখ্য, বর্তমানে আম উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। বাংলাদেশের সুস্বাদু আম বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয়। প্রধানত ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ফিলিপাইন, সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার, যুক্তরাজ্য, ইতালি, জার্মানি, ফ্রান্স, সুইডেন এবং কানাডার মতো দেশগুলোতে বাংলাদেশের আম রপ্তানি করা হয়।
বিশ্বে আম রপ্তানিকারক শীর্ষ দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে মেক্সিকো, থাইল্যান্ড, ব্রাজিল, পেরু, নেদারল্যান্ডস, ভারত, পাকিস্তান, ভিয়েতনাম, স্পেন ও ইকুয়েডর। এর মধ্যে শীর্ষ আম রপ্তানিকারক দেশ মেক্সিকো বছরে প্রায় ৪ লাখ ২১ হাজার ৬৩৬ টন আম রপ্তানি করে।
Copyright © 2025 পজিটিভ বিডি নিউজ ২৪. All rights reserved.