বুধবার, ১৬ই এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

৯০ দিনের শুল্ক বিরতিকে কৌশলগতভাবে কাজে লাগাতে হবে : অ্যামচ্যাম

৯০ দিনের শুল্ক বিরতিকে কৌশলগতভাবে কাজে লাগাতে হবে : অ্যামচ্যাম

পজিটিভ বিডি নিউজ ২৪ডট কম  (ঢাকা): আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স ইন বাংলাদেশ (অ্যামচ্যাম) এর উদ্যোগে আয়োজিতযুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক প্রভাব এবং করণীয়শীর্ষক সংলাপে বক্তারা বলেছেন, ৯০ দিনের শুল্ক বিরতিকে কৌশলগতভাবে কাজে লাগাতে হবে

বক্তারা চীনের পোশাক রপ্তানিতে উচ্চ শুল্কের কারণে বাংলাদেশের সামনে বিশেষ করে সিনথেটিক পণ্যে একটি বিরল সুযোগ তৈরি হয়েছে বলে মন্তব্য করেন। এই সম্ভাবনাকে  দ্রুত কাজে লাগানোর আহ্বান জানান এবং এলডিসি উত্তরণের আগে গভীর ব্যাকওয়ার্ড লিঙ্কেজ গড়ে তোলারও তাগিদ দেওয়া হয়। এসব বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণের পরিকল্পনায় বেসরকারি খাতকে অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানানো হয়

আজ রোববার বনানী একটি বেসরকারি হোটেলে অ্যামচ্যামের উদ্যোগেযুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক প্রভাব এবং করণীয়শীর্ষক এই গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করা হয়

এই গোলটেবিল আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে পণ্য আমদানিকারক যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানিকারক শীর্ষস্থানীয় বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান, অ্যামচ্যাম সদস্যবৃন্দ, বাণিজ্য শিল্প মন্ত্রণালয়, এনবিআর, ইপিবি, বিডা, ট্যারিফ কমিশন অন্যান্য নিয়ন্ত্রক সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ, গবেষক এবং অর্থনীতিবিদরা অংশগ্রহণ করেন। যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের বাণিজ্যিক উপদেষ্টা জন ফে এবং অন্যান্য দূতাবাস কর্মকর্তারাও সংলাপে অংশ নেন

অ্যামচ্যাম সভাপতি সৈয়দ এরশাদ আহমেদ যুক্তরাষ্ট্রকে বাংলাদেশের শীর্ষ রপ্তানির বাজার প্রধান বিনিয়োগকারী হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, যারা পুঁজি, প্রযুক্তি স্থানান্তর এবং বীমা, আতিথেয়তা প্রযুক্তি খাতে দক্ষতা সরবরাহ করছে। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সরকার জনগণের মধ্যে ৫০ বছরের আস্থার সম্পর্ক ফলে এর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পারস্পরিক শুল্ক সমন্বয় এবং বাণিজ্য বাধা দূরীকরণের লক্ষ্যে একটি দ্বিপক্ষীয় চুক্তি হতে পারে

তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের শুল্ক অশুল্ক বাধা মোকাবিলায় গৃহীত পদক্ষেপের প্রশংসা করে বলেন, অর্থনৈতিক কূটনীতির পর্যায়ে এখনো অনেক কাজ বাকি আছে। তিনি সরকারের কর্মকর্তা যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণ এবং সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ জানান

এলএফএমইএবি সভাপতি অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর যুক্তরাষ্ট্রকে বাংলাদেশের শীর্ষ রপ্তানির গন্তব্য এবং প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি হিসেবে উল্লেখ করেন

তিনি বলেন, অর্থনীতির গতিপ্রকৃতিতে বৈচিত্র্য আনার চেষ্টা হলেও সেটি এখনো যথেষ্ট নয়। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে হাজার কর্মসংস্থান তৈরি করাবেসবল গ্লাভসেরসাফল্যের কথা তুলে ধরে বলেন, ব্যক্তিপর্যায়ের সম্পর্ক, সাপ্লাই চেইনের সুযোগ যেমন জুতার জন্য যুক্তরাষ্ট্রগামী কাঁচামাল (চামড়া) এবং মূল্য নির্ধারণের সমস্যা সমাধান সাপেক্ষে সয়াবিনভিত্তিক ভোজ্যতেলে সহযোগিতার সম্ভাবনার বাড়ানো যায়

তিনি জানান, আগামী ২১ এপ্রিল ইউএসটিআর বৈঠক সামনে রেখে এনবিআর ২০টি রাজস্ব আয়কারী পণ্যের (প্রায় ১০০ মিলিয়ন ডলার) উপর শুল্ক পর্যালোচনা করছে এবং অশুল্ক বাধা দূর করতে কাজ করছে

সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, অশুল্ক বাধার মধ্যে ২৪ ঘণ্টা বিরতিহীন কাস্টমস অপারেশন এবং বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তি অধিকারের (আইপিআর) কঠোর প্রয়োগ প্রয়োজন এবং হালনাগাদ পেটেন্ট আইন বাস্তবায়নের অগ্রগতি ইউএসটিআর বৈঠকে উপস্থাপন করার আহ্বান জানান

তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশকে কেবল শুল্কেই সীমাবদ্ধ না থেকেশুল্ক ছাড়াও অন্য দিকগুলোতেওনজর দিতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রে অধিকাংশ রপ্তানিযোগ্য পণ্যে ইতোমধ্যে শূন্য বা প্রায় শূন্য শুল্ক আছে, কিন্তু অতিরিক্ত শুল্কের ওপর নির্ভরতা দীর্ঘমেয়াদে টেকসই নয় এবং এর একটি স্পষ্ট স্বল্প দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে বিলুপ্তি প্রয়োজন

বাংলাদেশের স্পেশালিটি সুয়েটার খাতের চ্যালেঞ্জগুলোর কথাও উঠে আসে আলোচনায়, যেখানে ১০% শুল্ক মার্জিন ক্ষয় করছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতাদের আস্থা হ্রাস পাচ্ছে। উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানো এবং সিনথেটিকসের ক্ষেত্রে চীনের উপর নির্ভরতা কমানোকে অগ্রাধিকার হিসেবে দেখা হচ্ছে

আগামী তিন মাসকে মার্কেট শেয়ার বাড়ানোর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রে চীনের পণ্যে শুল্ক বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশ সামনে সম্ভাবনা এগিয়ে আসতে পারে। বাংলাদেশের রপ্তানিযোগ্য পোশাক কারখানাগুলো প্রতিযোগিতামূলক হলেও, শুল্ক প্রক্রিয়া সহজিকরণ, কাঁচামালের সংকট মূল্য চাপ মোকাবিলায় সরকারের সমর্থন জরুরি

গোল টেবিল বৈঠকে প্রতিযোগিতা বৃদ্ধির জন্য চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যকারিতা বাড়ানো জরুরি বলে জানানো হয়। কাস্টমস প্রক্রিয়া সহজিকরণ, বন্ডেড গুদাম চালু করা এবং চীন থেকে কাঁচামাল, বিশেষ করে তুলা আমদানির ব্যবস্থা করা অত্যাবশ্যক

বাংলাদেশের বাণিজ্য প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য একটি তিন ধাপের কৌশল প্রস্তাব করা হয় : () রপ্তানির প্রকৃত শক্তি সুবিধা মূল্যায়ন, () লজিস্টিকস বন্দর খরচ কমিয়ে উৎপাদন শিপিং খরচ হ্রাস, () প্রতিযোগীদের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রে অবতরণকৃত পণ্যের খরচে শুল্ক বাণিজ্য বাধার প্রভাব বিশ্লেষণ

যুক্তরাষ্ট্রবাংলাদেশ বাণিজ্য ঘাটতির প্রসঙ্গে বলা হয়, উচ্চ মানসম্পন্ন মার্কিন তুলা দিয়ে উৎপাদিত পণ্যে অগ্রাধিকারমূলক শুল্ক সুবিধা দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হলে দুই দেশের জন্যই লাভজনক হবে। ৩৭% থেকে কমিয়ে ১০% শুল্ক কিছুটা স্বস্তি দিয়েছে, তবে বিশেষ করে ক্ষুদ্র কারখানার জন্য মূল্য চাপ এখনো রয়ে গেছে। যাদের জন্য সরকারি সহায়তা প্রয়োজন। জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি ৪৭% বেড়েছেমূলত শুল্ক প্রভাবের পূর্বাভাসে অগ্রিম অর্ডারের কারণে। সাময়িক পতন আসলেও বছর শেষে ইতিবাচক প্রবণতা প্রত্যাশা করা হচ্ছে। বাংলাদেশকে প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি, খরচ হ্রাস চীনের পরিবর্তিত বিশ্ব বাণিজ্য ভূমিকাকে কাজে লাগাতে হবে

তথ্যপ্রযুক্তি প্রযুক্তি খাতে অগ্রাধিকার দেওয়ার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়। যেখানে এনবিআরকে পুরোনো এইচএস কোড হালনাগাদ করতে বলা হয়। কারণ এর ফলে ভুল কর বসানো হচ্ছে। হার্ডওয়্যার আমদানিতে ১৫.% এবং সফটওয়্যারে ৫৬% পর্যন্ত কর বসানো হচ্ছে, যা ডিজিটাল অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করছে। এইচএস কোড হালনাগাদে বিলম্ব এবং আইটি পার্ক বিনিয়োগকারীদের জন্য কর ছাড়ের অসঙ্গতিও উল্লেখ করা হয়। এই সমস্যাগুলোর সমাধানে এনবিআরের সঙ্গে একটি ওয়ার্কশপ আয়োজনের প্রস্তাব দেওয়া হয়

এনবিআরসদস্য (ভ্যাট বাস্তবায়ন আইটি) মোহাম্মদ বেলাল হোসেন চৌধুরী জানান, সেন্ট্রাল বন্ডেড ওয়্যারহাউসের জন্য খসড়া আইন প্রণয়নের কাজ চলমান আছে। যা দীর্ঘদিনের সমস্যাগুলোর সমাধানে সহায়ক হবে। তিনি বাংলাদেশের শক্তিশালী বন্ড সংস্কৃতির কথা তুলে ধরেন এবং এনবিআরের সংস্কারমূলক সহায়তা লিড টাইম কমানোর উদ্যোগের কথা বলেন

তিনি যুক্তরাষ্ট্র অর্থায়িত প্রকল্প এবং বৈশ্বিক আমদানি পথ ব্যবহার করে আমদানি নির্ভরতা থেকে রপ্তানির সুযোগ তৈরির আহ্বান জানান। আসন্ন আইন অনুযায়ী, আরও খাতে বন্ডেড সুবিধা সম্প্রসারিত করা হবে এবং এর জন্য প্রশিক্ষিত একটি দল থাকবে, যারা ব্যতিক্রমধর্মী কার্গো পরিচালনা করবে

১০ Views
CATEGORIES
Share This

COMMENTS