প্রিন্ট এর তারিখঃ এপ্রিল ১৬, ২০২৫, ৯:৫৫ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ এপ্রিল ১৩, ২০২৫, ২:০৩ অপরাহ্ণ
ব্যবসা ও বিনিয়োগ বান্ধব, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং সময়োপযোগী বাজেটের প্রত্যাশা ব্যবসায়ীদের

পজিটিভ বিডি নিউজ ২৪ডট কম (ঢাকা): ব্যবসা ও বিনিয়োগ বান্ধব, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং সময়োপযোগী বাজেটের প্রত্যাশা ব্যবসায়ীদের। যাতে করের বোঝা লাঘব হবে। রোববার ঢাকা চেম্বার, সমকাল এবং চ্যানেল-২৪ যৌথভাবে আয়োজিত ‘প্রাক-বাজেট আলোচনা ২০২৫-২৬ : বেসরকারি খাতের প্রত্যাশা’ শীর্ষক সভায় বক্তারা এসব বলেন।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)-এর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান, এফসিএমএ বিশেষ অতিথি হিসেবে যোগদান করেন। ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকীন আহমেদ সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এ আলোচনা সভায় আইসিসি বাংলাদেশ-এর সভাপতি মাহবুবুর রহমান, এফবিসিসিআই’র সাবেক সভাপতি আব্দুল আউয়াল মিন্টু, মীর নাসির হোসেন এবং সাবেক বাণিজ্য মন্ত্রী আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী সম্মানিত অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন। আলোচনা সভায় ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন দৈনিক সমকালের সম্পাদক শাহেদ মুহাম্মদ আলী।
অনুষ্ঠানের স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকীন আহমেদ বলেন, দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতিধারা অব্যাহত রাখতে রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধিকল্পে করজাল সম্প্রসারণ এবং কর ব্যবস্থাপনার সহজিকরণ করা আবশ্যক। এছাড়াও অটোমোটেড কর্পোরেট কর রিটার্ন পদ্ধতি চালু, আমদানি পর্যায়ে আগাম কর উৎপাদনকারীদের জন্য বিলুপ্তি ও বাণিজ্যিক আমদানিকারকদের জন্য হ্রাস করা, অনানুষ্ঠানিক খাতের ব্যবসায়ীদের জন্য ১% এবং অন্যান্যদের জন্য ভ্যাটের হার সিঙ্গেল ডিজিট হার নির্ধারণের প্রস্তাব করেন ডিসিসিআই সভাপতি।
তিনি বলেন, স্থানীয় ও বৈশ্বিক বিদ্যমান পরিস্থিতি বিবেচনায় ঋণের সুদহার কমানো, ঋণ শ্রেণিবদ্ধকরণের সময়সীমা আরোও ছয়মাস পেছানো ও সকল শিল্পের জন্য অন্তত ৬ মাস মোরাটিরিয়াম সুবিধা প্রদান, মন্দ ঋণ হ্রাসে আর্থিক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা, সিএমএসএমই খাতের অর্থায়নের শর্তাবলির সহজিকরণ এবং দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের লক্ষ্যে পুঁজিবাজারে ইক্যুইটি ভিত্তিক শেয়ার নীতি প্রণয়ন করা প্রয়োজন। বাংলাদেশের এলডিসি গ্রাজুয়েশন এবং শিল্পায়নের গতিধারা অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে অবকাঠামো ও লজিস্টিক ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে নির্মাণ উপকরণ ও মেশিনারির উপর শুল্ক এবং ভ্যাট ছাড় নিশ্চিতকরণ, শিল্পখাতে প্রতিযোগী সক্ষম জ্বালানির মূল্য নির্ধারণের পাশাপাশি নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিতকরণের উপর জোরারোপ করেন তাসকীন আহমেদ।
এছাড়াও রপ্তানি আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে কৃষি, চামড়া, ঔষধ, অটোমোবাইল, হালকা প্রকৌশল ও তথ্যপ্রযুক্তির ন্যায় সম্ভাবনাময় খাতে আসন্ন বাজাটে বিশেষ সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা প্রয়োজন বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।
বিশেষ অতিথি’র বক্তব্যে এনবিআরের চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান, এফসিএমএ বলেন পুরো রাজস্ব ব্যবস্থাপনার অটোমেশনের পাশাপাশি বিদ্যমান রাজস্ব, ভ্যাট ও শুল্ক হার যৌক্তিকীকরণ করা হবে। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর সম্প্রতি ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডো চালু করা হয়েছে এবং ব্যবসায়ীরা এর সুবিধাও পাচ্ছেন। তিনি জানান, কর কাঠামোর প্রতিটি স্তরে সামনের দিনগুলোতে অটোমেশন বাস্তবায়ন করা হবে এবং শিগগিরই বন্ড অটোমেশন প্রকল্প চালু হবে।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, এমনিতেই আমাদের ব্যক্তি পর্যায়ে এবং কর্পোরেট কর হার তুলনামূলক বেশ কম, তাই এ বছর উক্ত খাতে কর অপরিবর্তিত রাখার ইঙ্গিত প্রদান করেন। তবে, আগামী বাজেটে রাজস্ব হারে বিদ্যমান বৈষম্য দূর হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
ইন্টারন্যাশন্যাল চেম্বার অব কমার্স-বাংলাদেশ (আইসিসিবি)-এর সভাপতি মাহবুবুর রহমান সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক বাংলাদেশের রপ্তানির উপর শুল্কারোপের প্রসঙ্গে বলেন, সরকারের উচিত এ ব্যাপারে নেগোশিয়েশনের উদ্যোগ নেওয়া এবং ডিসিসিআই-সহ বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিবৃন্দের সমন্বয়ে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা। তিনি বলেন, শুধু কর ব্যবস্থাপনাই নয়, শুল্ক কাঠামোকে সম্পূর্ণ অটোমেশনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। তিনি আরো বলেন, বাজেট শুধু এক বছরের জন্যই নয়, দেশি বিনিয়োগকারীদের আগামী বাজেটে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সুবিধা প্রদান করা হলে, আমাদের অর্থনীতিতে তারা অধিক হারে অবদান রাখতে পারবে।
সাবেক বাণিজ্য মন্ত্রী আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বিনিয়োগ ও ব্যবসার প্রবৃদ্ধি না বাড়লে অর্থনীতি সম্প্রসারিত হবে না, তবে এজন্য সহায়ক নীতিমালা নিশ্চিতকরণে প্রয়োজনীয় সংস্কার আবশ্যক। আমাদের দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন প্রক্রিয়ায় গলদ রয়েছে, ফলে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় ব্যবসা-বাণিজ্যে অগ্রগতি পরিলক্ষিত হচ্ছে না, কারণ হলো স্বল্পমেয়াদে আমানত সংগ্রহ করে দীর্ঘমেয়াদে ঋণ প্রদান কখনই টেকসই হয় না। বিনিয়োগ সম্প্রসারণের জন্য কার্যকর এবং সহায়ক কর নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে, যেখানে আমরা বেশ পিছিয়ে রয়েছি বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।
এফবিসিসিআই’র সাবেক সভাপতি আব্দুল আউয়াল মিন্টু বলেন, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ব্যবসা বান্ধব বাজেটের কোন বিকল্প নেই। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন যাবত সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি বজায় থাকলে বেসরকারি খাতে প্রবৃদ্ধি আশানুরূপ হবে না। তিনি আরো বলেন, আমাদের উদ্যোক্তারা পণ্য উৎপাদনের মাধ্যমে আর্থিক কর্মকাণ্ড সম্প্রসারিত করতে আগ্রহী, তবে প্রয়োজন সহায়ক নীতিমালা। এছাড়াও রাজস্ব নীতিমালার সাথে সম্পৃক্ত অন্যান্য নীতিসমূহের মধ্যে সমন্বয় থাকা জরুরি বলেও তিনি মত প্রকাশ করেন। কর-জিডিপি’র হার বৃদ্ধিকল্পে তিনি টিআইএন থাকা সত্ত্বেও যারা কর প্রদান করেন না, তাদেরকে করের আওতায় নিয়ে আসার উপর জোরারোপ করেন।
এফবিসিসিআই’র সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন বলেন, গতানুগতিক ঘাটতি বাজেট এবং সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির কারণে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় পৌঁছায়নি। তিনি সরকারের নিকট হতে একটি ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বান্ধব, অন্তর্ভুক্তিমূলক, বাস্তবমুখী এবং সময়োপযোগী বাজেট প্রত্যাশা করেন। এছাড়াও রাজস্ব ঘাটতি মেটাতে সরকারি ব্যয় হ্রাসে আরো মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, কর হয়রানি বন্ধ করা গেলে অধিক সংখ্যক মানুষ কর প্রদানে উৎসাহিত হবে।
অনুষ্ঠানের আয়কর ও মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট), ‘আর্থিক খাত’, ‘শিল্প ও বাণিজ্য’ এবং ‘অবকাঠামো’ চারটি সেশনের নির্ধারিত আলোচনা সেশনে আইসিএবি'র সাবেক সভাপতি মুহাম্মদ ফোরকান উদ্দিন, এফসিএ, ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি রিজওয়ান রাহমান, এনবিআরের সদস্য (আয়কর) এ কে এম বদিউল আলম, উর্মি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসিফ আশরাফ, বিকেএমইএ’র সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, ডিসিসিআই’র সাবেক সভাপতি মতিউর রহমান, ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ মোহাম্মদ মারুফ, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান এ কে এম হাবিবুর রহমান, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক (গবেষণা) ড. সায়েরা ইউনুস, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ-এর চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম, কনফিডেন্স গ্রুপের ভাইস-চেয়ারম্যান ইমরান করিম, বাংলাদেশ ফ্রেইডর্স ফরওয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কবির আহমেদ এবং ডিসিসিআই’র সাবেক সভাপতি আবুল কাসেম খান অংশগ্রহণ করেন।
ডিসিসিআই সাবেক সভাপতি রিজওয়ান রহামান বলেন, বিদ্যমান পরিস্থিতির আলোকে বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা এলডিসি গ্রাজুয়েশনের জন্য প্রস্তুত নয়, তাই সরকারের আরও ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত।
ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আবুল কাসেম খান বলেন, ইতোমধ্যে লজিস্টিক নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে, তবে এ খাতের সুফল পেতে হলে দশ বছর মেয়াদি একটি লজিস্টিক মাস্টারপ্ল্যান থাকা প্রয়োজন। এছাড়াও তিনি বন্ড মার্কেটের উন্নয়নের ওপর জোরারোপ করেন।
বিকেএমইএ’র সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম যুক্তরাষ্ট্রের ভালো মানের তুলা আমদানি বৃদ্ধিতে ওয়্যার হাউস নির্মাণ সুবিধা প্রদানের উপর গুরুত্বারোপ করেন, ফলে সেদেশের সাথে আমাদের বাণিজ্য ঘাটতি হ্রাস পাবে। এছাড়াও ম্যান মেইড ফাইবারের মত হাই ভ্যালু পণ্য উৎপাদনে উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসার ওপর তিনি জোরারোপ করেন।
ডিসিসিআই ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি রাজীব এইচ চৌধুরী, সহ-সভাপতি মো. সালিম সোলায়মান-সহ পরিচালনা পর্ষদের সদস্যবৃন্দ, সাবেক সভাপতিবৃন্দ এবং সরকারি-বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিবৃন্দ উক্ত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
Copyright © 2025 পজিটিভ বিডি নিউজ ২৪. All rights reserved.