শুক্রবার, ১৮ই এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

বাংলাদেশে ভোগ ও বিনিয়োগ মাঝারিভাবে বৃদ্ধি পাবে : এডিবি

বাংলাদেশে ভোগ ও বিনিয়োগ মাঝারিভাবে বৃদ্ধি পাবে : এডিবি

পজিটিভ বিডি নিউজ ২৪ডট কম  (ঢাকা): এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধির ফলে ভোগ এবং বিনিয়োগ মাঝারিভাবে বৃদ্ধি পাবে।

তবে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক জানিয়েছে, সংকোচনশীল মুদ্রা ও রাজস্ব নীতি এবং বিনিয়োগকারীদের সতর্কতার মাধ্যমে এই প্রবণতা আংশিকভাবে কমানো যেতে পারে।

বুধবার প্রকাশিত এডিবি’র সর্বশেষ প্রতিবেদন, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুক (এডিও) এপ্রিল-২০২৫ অনুসারে, বিশ্বব্যাপী শুল্ক বৃদ্ধি সময়ের সাথে সাথে বাংলাদেশের রপ্তানি এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ওপরও প্রভাব ফেলবে বলে আশা করা হচ্ছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরবরাহের দিক থেকে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, আর্থিক খাতের দুর্বলতা এবং পরিবারের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাসের কারণে পরিষেবা বৃদ্ধি ধীর হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বারবার বন্যার পর কৃষিক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি মাঝারি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অন্যদিকে রপ্তানি বৃদ্ধির সাথে সাথে উৎপাদন খাতে প্রত্যাবর্তনের মাধ্যমে শিল্পের প্রবৃদ্ধি সামান্য উন্নতি হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

আজ বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এডিবি’র বাংলাদেশ আবাসিক মিশনের প্রতিবেদন বাংলাদেশ অধ্যায় প্রকাশ করা হয়েছে।

বাংলাদেশে এডিবি’র কান্ট্রি ডিরেক্টর হো ইয়ুন জিয়ং উদ্বোধনী ও সমাপনী বক্তব্য রাখেন এবং সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। এডিবি’র কান্ট্রি অর্থনীতিবিদ চন্দন সাপকোটা একটি পাওয়ার-পয়েন্ট উপস্থাপনা করেন।

২০২৫ সালের এপ্রিল মাসের এডিও প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন (প্রবৃদ্ধি) ৩.৯% বৃদ্ধি পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে, যা ২০২৬ অর্থবছরে ৫.১% দাঁড়াবে।
২০২৫ অর্থবছরে ভারতের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬.৭ শতাংশে বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। অপরদিকে পাকিস্তানের প্রবৃদ্ধি ২.৫ শতাংশ হবে।

বাংলাদেশের পোশাক খাতে রপ্তানি বৃদ্ধি সত্ত্বেও রাজনৈতিক পরিবর্তন, প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি, শিল্প অস্থিরতা এবং উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির কারণে দেশীয় চাহিদা দুর্বল হওয়ার কারণে ধীর প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ২০২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ছিল ৪.২%।

হো ইউন জিয়ং বলেছেন, ‘বাহ্যিক এবং অভ্যন্তরীণ প্রতিকূলতা সত্ত্বেও বাংলাদেশের অর্থনীতি স্থিতিশীল রয়েছে। যা গুরুত্বপূর্ণ কাঠামোগত সংস্কার বাস্তবায়নের মাধ্যমে শক্তিশালী করা যেতে পারে।’

তিনি আরও বলেছেন,  ‘বাংলাদেশের উচিত তৈরি পোশাক খাতের বাইরেও বেসরকারি খাতের উন্নয়নকে উৎসাহিত করে তার অর্থনীতিকে বৈচিত্র্যময় করা। স্থিতিশীল অবকাঠামো বৃদ্ধি, জ্বালানি নিরাপত্তা উন্নত, আর্থিক খাতের শাসনব্যবস্থা শক্তিশালী এবং বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করতে, কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে এবং প্রতিযোগিতামূলকতা বৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাইকারি বাজারে প্রতিযোগিতার চাপ, অপর্যাপ্ত বাজার তথ্য, সরবরাহ শৃঙ্খলের সীমাবদ্ধতা এবং টাকার অবমূল্যায়নের কারণে মুদ্রাস্ফীতি ২০২৪ অর্থবছরের ৯.৭% থেকে ২০২৫ অর্থবছরে ১০.২% বৃদ্ধি পাবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।

বাণিজ্য ঘাটতি সংকুচিত হওয়া এবং রেমিট্যান্স বৃদ্ধির ফলে চলতি হিসাবের ঘাটতি ২০২৪ অর্থবছরের জিডিপির ১.৪% থেকে ২০২৫ অর্থবছরে জিডিপির ০.৯%-এ নেমে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

মার্কিন প্রশাসন কর্তৃক ২ এপ্রিল নতুন শুল্ক ঘোষণার আগেই প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস চূড়ান্ত করা হয়েছিল। তাই বেসলাইন অনুমানগুলো কেবলমাত্র পূর্বে বিদ্যমান শুল্ক গুলোকেই প্রতিফলিত করে।

তবে, ২০২৫ সালের এডিও এপ্রিলে উচ্চ শুল্ক কীভাবে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে প্রবৃদ্ধিকে প্রভাবিত করতে পারে তার একটি বিশ্লেষণ রয়েছে।

দেশটির অর্থনীতিবিদ চন্দন সাপকোটা তার পাওয়ার-পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনে বলেছেন, বিনিয়োগ আকর্ষণ, প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি এবং স্বল্পোন্নত দেশ থেকে মসৃণ ও টেকসই উত্তরণ নিশ্চিত করার জন্য বিনিয়োগ নীতি এবং ব্যবসা-বান্ধব পরিবেশের সংস্কার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

তিনি বলেছেন, উন্নত বাণিজ্য ভারসাম্য এবং শক্তিশালী রেমিট্যান্স প্রবাহের কারণে ২০২৫ এবং ২০২৬ অর্থবছরে চলতি ঘাটতি আরো কমে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।

নেতিবাচক ঝুঁকি আরো বাড়ার কথা উল্লেখ করে চন্দন বলেছেন, এপ্রিলের শুরুতে ঘোষিত মার্কিন শুল্কের পূর্ণ বাস্তবায়ন এবং আরো মার্কিন বাণিজ্য নীতির পরিবর্তনের ফলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে এবং বড় ধরনের অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে।
এডিবি কান্ট্রি ইকোনমিস্ট এফডিআই আকর্ষণ এবং বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় সুগঠিত সংস্কার, লাইসেন্সিং এবং ব্যবসায়িক পদ্ধতি সহজীকরণ, আন্তঃসংস্থা এবং নীতি সমন্বয় উন্নত করা, এবং নিয়ন্ত্রক স্বচ্ছতা উন্নত করতে বিআইসিআইপিকে কাজে লাগানোর ওপরও জোর দিয়েছেন।

চন্দন বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) উন্নয়নের জন্য বিনিয়োগ সুবিধা প্রদানে যোগদানের পরামর্শ দেন। যাতে সংস্কারের পথ দেখা যায় এবং নীতিগত সমন্বয় সাধনে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য বিডাকে ক্ষমতায়ন এবং বিনিয়োগ প্রস্তুতির ইঙ্গিত দেওয়া যায়।

জটিল চ্যালেঞ্জগুলো একসাথে সমাধানের জন্য তার সদস্য এবং অংশীদারদের সাথে কাজ করে, এডিবি জীবনকে পরিবর্তন করতে, মানসম্পন্ন অবকাঠামো তৈরি করতে এবং গ্রহকে সুরক্ষিত করতে উদ্ভাবনী আর্থিক সরঞ্জাম এবং কৌশলগত অংশীদারিত্ব ব্যবহার করে। ১৯৬৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এডিবি’র ৬৯ জন সদস্য রয়েছে, যার মধ্যে ৪৯ জন এই অঞ্চলের।

১৯ Views
CATEGORIES
Share This

COMMENTS