সোমবার, ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

অভিষেকে জাঙ্গোর সেঞ্চুরিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে হোয়াইটওয়াশ বাংলাদেশ

অভিষেকে জাঙ্গোর সেঞ্চুরিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে হোয়াইটওয়াশ বাংলাদেশ

পজিটিভ বিডি নিউজ ২৪ডট কম  (ঢাকা): অভিষেকে আমির জাঙ্গোর দুর্দান্ত সেঞ্চুরিতে ওয়ানডেতে তিন ম্যাচের সিরিজে তৃতীয়বারের মত ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে  বাংলাদেশ ক্রিকেট দল গত রাতে সিরিজের তৃতীয় শেষ ম্যাচে বাংলাদেশের ছুঁড়ে দেওয়া ৩২২ রানের টার্গেট স্পর্শ করে উইকেটে জয় পায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচ যথাক্রমে উইকেটে জিতেছিলো ক্যারিবীয়রা এর আগে ২০০৪ ২০১৪ সালে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে ক্যারিবীয়দের কাছে হোয়াইটওয়াশের লজ্জা পেয়েছিলো

বাংলাদেশ। অভিষেক ওয়ানডেতে ৮৩ বলে ১০৪ রানের অনবদ্য ইনিংস খেলেন ২৭ বছর বয়সী বাঁহাতি ব্যাটার জাঙ্গো

সেন্ট কিটসের ওয়ার্নার পার্কে টস হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ইনিংসের চতুর্থ বলেই জীবন পান বাংলাদেশ ওপেনার সৌম্য সরকার। পেসার আলজারি জোসেফের বলে স্লিপে সৌম্যর ক্যাচ ফেলেন ব্রান্ডন কিং

শূন্যতে সৌম্য জীবন পেলেও, শূন্যতেই বিদায় নেন আরেক ওপেনার তানজিদ হাসান। তৃতীয় ওভারে আলজারির দ্বিতীয় বলে পুল করতে গিয়ে তানজিদ আকাশে বল তুলে দিলে মিড উইকেটে ক্যাচ লুফে নেন শেরফানে রাদারফোর্ড

একই ওভারের চতুর্থ বলে বাংলাদেশের দ্বিতীয় উইকেটের পতন ঘটান আলজারি। অফস্টাম্পের বাইরের বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে স্লিপে ব্রান্ডনকে ক্যাচ দিয়ে খালি হাতে ফিরেন লিটন দাস

রানে উইকেট পতনের পর সাবধানে খেলতে শুরু করেন সৌম্য অধিনায়ক মেহেদি হাসান মিরাজ। এতে পাওয়ার প্লেতে ৪৬ রান পায় বাংলাদেশ

মিরাজের সাথে জুটিতে ৫৬ বলে পঞ্চাশ পূর্ণ করার পর আবারও জীবন পান সৌম্য। ১৮তম ওভারে স্পিনার গুদাকেশ মোতির বলে লং অনে ৪৫ রানে সৌম্যর ক্যাচ ফেলেন অভিষিক্ত ওয়েস্ট ইন্ডিজের আমির জাঙ্গো

২০তম ওভারের শুরুতে বাংলাদেশের রান ১শ স্পর্শ করে। একই  ওভারের চতুর্থ বলে মিরাজ ষষ্ঠ এবং শেষ ডেলিভারিতে ১৩তম হাফসেঞ্চুরি পূর্ন করেন সৌম্য। ২১তম ওভারে জুটিতে ১শ পূর্ণ করেও রানের চাকা সচল রেখেছিলেন মিরাজ সৌম্য

২৪তম ওভারের তৃতীয় বলে সৌম্যকে শিকার করে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ব্রেকথ্রু এনে দেন মোতি। লেগ বিফোর আউটের আগে ৬টি চার ৪টি ছক্কায় ৭৩ বলে ৭৩ রান করেন সৌম্য। তৃতীয় উইকেটে সৌম্যমিরাজ ১২৭ বলে ১৩৬ রান যোগ করেন

সতীর্থকে হারানোর পর রাদারফোর্ডের সরাসরি থ্রোতে রান আউট হন  ৮টি চার ২টি ছক্কায় ৭৩ বলে ৭৭ রান করা টাইগার দলনেতা মিরাজ

মিরাজ ফেরার পরপরই সাজঘরের পথ ধরেন আফিফ হোসেনও। রাদারফোর্ডের বলে কিংকে ক্যাচ দেন ২টি চারে ১৫ রান করা আফিফ

১৭১ রানে পঞ্চম উইকেট পতনে চাপ অনুভব করতে শুরু করে বাংলাদেশ। অবস্থায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ বোলারদের সামনে প্রতিরোধ গড়ে তুলেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ জাকের আলি। তাদের নৈপুন্যে ৩৮তম ওভারে ২শ ৪৪তম ওভারে আড়াইশ রান স্পর্শ করে বাংলাদেশ।
এরপর ৪৮ বলে ওয়ানডে ৩২তম সিরিজে টানা তৃতীয় হাফসেঞ্চুরি পূর্ণ করেন মাহমুদুল্লাহ। পঞ্চম ম্যাচে এসে ৫৩ বলে ওয়ানডেতে প্রথম হাফসেঞ্চুরির দেখা পান জাকের।
মাহমুদুল্লাহজাকেরের জোড়া হাফসেঞ্চুরির পর ৪৯তম ওভারে ৩শতে পা রাখে বাংলাদেশ। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের পায় ৫০ ওভারে উইকেটে ৩২১ রানের সংগ্রহ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে এটিই সর্বোচ্চ দলীয় রান বাংলাদেশের। আগেরটি ছিলো ৩০১ রানের। ২০১৮ সালে এই সেন্ট কিটসেই উইকেটে ৩০১ রান করে ১৮ রানে ম্যাচ জিতেছিলো টাইগাররা।
শেষ ওভারে ৫৯ রান তুলেন মাহমুদুল্লাহজাকের। এতে জুটিতে ১১৭ বলে ১৫০ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়েন তারা। ওয়ানডেতে ষষ্ঠ উইকেটে এটিই সর্বোচ্চ রানের জুটি বাংলাদেশের। আগেরটি ২০১৮ সালে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ১২৮ রানের জুটি গড়েছিলেন ইমরুল কায়েস মাহমুদুল্লাহ

এবার ৭টি চার ৪টি ছক্কায় ৬৩ বলে মাহমুদুল্লাহ অপরাজিত ৮৪ রান করেন। এই ইনিংস খেলার পথে ওয়ানডেতে বাংলাদেশের হয়ে তামিম ইকবালের সর্বোচ্চ ১০৩টি ছক্কার রেকর্ড ভেঙেছেন মাহমুদুল্লাহ। ৫টি চার ২টি ছক্কায় ৫৭ বলে অনবদ্য ৬২ রান করেন জাকের। বল হাতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের আলজারি ২টি এবং মোতিরাদারফোর্ড ১টি করে উইকেট নেন

৩২২ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে পঞ্চম ওভারের মধ্যেই দলীয় ৩১ রানে উইকেট হারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ব্রান্ডন কিং ১৫ রানে রান আউট, অ্যালিক আথানাজে রানে স্পিনার নাসুম আহমেদের এবং অধিনায়ক শাই হোপ রানে শিকার করেন পেসার হাসান মাহমুদের

চতুর্থ উইকেটে কেসি কার্টি শেরফানে রাদারফোর্ডের ৫৭ বলে ৫৫ রানের জুটিতে শুরুর ধাক্কা কাটিয়ে উঠেছিলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ১৫তম ওভারে তানজিদের ক্যাচ বানিয়ে রাদারফোর্ডকে ৩০ রানে শিকার করে জুটি ভাঙেন তাসকিন

৮৬ রানে চতুর্থ উইকেট হারানোর পর কার্টির সাথে জুটি বাঁধেন জাঙ্গো। বাংলাদেশ বোলারদের দারুনভাবে সামাল দিয়ে রানের চাকা দ্রুত ঘুড়িয়েছেন তারা। এতে দলের রান দেড়শ ছাড়িয়ে ৩১তম ওভারে ২শ স্পর্শ করে। এসময় ওয়ানডেতে কার্টি পঞ্চম জাঙ্গো প্রথম অর্ধশতকের দেখা পান

৩৪তম ওভারে সৌম্যর দারুণ ক্যাচে কার্টিকে নার্ভাস নাইন্টিতে থামিয়ে বাংলাদেশকে ব্রেকথ্রু এনে দেন স্পিনার রিশাদ হোসেন। ১০টি চার ২টি ছক্কায় ৮৮ বলে ৯৫ রান করেন কার্টি

কার্টির পর রোস্টন চেজকে ১২ রানে দারুণ ক্যাচে বিদায় দেন রিশাদ। চেজ যখন বিদায় নেন তখন জয়ের জন্য ৭৭ বলে ৮৮ রান দরকার ছিলো ওয়েস্ট ইন্ডিজের

ষষ্ঠ উইকেটে ৫৩ বলে ৯১ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়ে ওভার বাকী থাকতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে দারুন জয়ের স্বাদ দেন জাঙ্গো মোতি। ওয়ার্নার পার্কে সর্বোচ্চ রান তাড়া করে ম্যাচ জয়ের রেকর্ড এটি। নিজেদের ইতিহাসে নিয়ে চতুর্থবার তিনশ বেশি রান তাড়া করে জয় পেয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ

দুবার জীবন পেয়ে ছক্কা মেরে অভিষেক ওয়ানডেতে সেঞ্চুরি করতে ৭৯ বল খেলেন জাঙ্গো। ইতিহাসের ১৮তম ওয়েস্ট ইন্ডিজের দ্বিতীয় ব্যাটার হিসেবে ওয়ানডের অভিষেক ম্যাচে সেঞ্চুরি করলেন তিনি। ১৯৭৮ সালে ক্যারিবীয়দের প্রথম ব্যাটার হিসেবে অ্যান্টিগায় অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে অভিষেকে সেঞ্চুরি করেছিলেন ডেসমন্ড হেইন্স

৬টি চার ৪টি ছক্কায় ৮৪ বলে ১০৪ রানে অপরাজিত থাকেন জাঙ্গো। ৩টি করে চারছক্কায় ৩১ বলে অনবদ্য ৪৪ রান করেন মোতি। বাংলাদেশের রিশাদ ২টি, হাসাননাসুম তাসকিন ১টি করে উইকেট নেন। ম্যাচ সেরা হন জাঙ্গো এবং সিরিজ সেরা রাদারফোর্ড

আগামী ১৬ ডিসেম্বর থেকে তিন ম্যাচের টিটোয়েন্টি সিরিজ শুরু করবে বাংলাদেশ ওয়েস্ট ইন্ডিজ

সংক্ষিপ্ত স্কোর :

বাংলাদেশ : ৫০ ওভারে ৩২১/ (মাহমুদুল্লাহ ৮৪*, মিরাজ ৭৭, সৌম্য ৭৩, জাকের ৬২*, আলজারি /৪৩)
ওয়েস্ট ইন্ডিজ : ৪৬ ওভারে ৩২৫/ (জাঙ্গো ১০৪*, কার্টি ৯৫, রিশাদ /৬৯)
ফল : ওয়েস্ট ইন্ডিজ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচ সেরা : জেইডেন সিলেস (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)
সিরিজ সেরা : শেরফানে রাদারফোর্ড (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)
সিরিজ : তিন ম্যাচ সিরিজে ব্যবধানে জিতলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ

৫৩ Views
CATEGORIES
Share This

COMMENTS