বৃহস্পতিবার, ১৪ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

দিনাজপুরের সজনা চাষে অপার সম্ভবনা ; মেটাবে পুষ্ঠি চাহিদা ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন

দিনাজপুরের সজনা চাষে অপার সম্ভবনা ; মেটাবে পুষ্ঠি চাহিদা ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন

মোরশেদ মানিক : সজনা চাষে দিনাজপুরের অপার সম্ভবনা রয়েছে মেটাবে পুষ্ঠি চাহিদা ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন। দিনাজপুরের মাটি বেশির ভাগই সমতল ও উচু, যা সজনা চাষের জন্য উপযোগি। অথচ এখন পর্যন্ত সজনা চাষ বানিজ্যিক ভাবে শুরু করেনি দিনাজপুর সদর সহ ১৩ উপজেলার চাষীগন। সজনা চাষীরা বানিজ্যিক ভাবে আবাদ শুরু করার পরিকল্পনা নিলে; মাটি পরীক্ষা সহ সব ধরনের সহযোগি করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন সরকারী বিভিন্ন দপ্তর ।

শীতকালীন সবজি সজনে। শীতকালীন হলেও ভেজষ ও পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ এ সজনের ডাঁটা এখন ফলে সব মৌসুমে। সজনে ডাঁটা ভোজন রসিকদের বেশ পছন্দের খাবার। সজনে পাতার পুষ্টিগুন সম্পর্কে অবহিতকরন অব্যাহত রয়েছে। তাই সজনে ডাটা ও পাতার দাম ও চাহিদাও রয়েছে বেশ।

স্বাস্থ ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রনালয় অধিন বাংলাদেশ জাতীয় পুষ্টি পরিষদের মহাপরিচালক ড. মোহাম্মদ মাহবুর বলেন, সজিনায় প্রচুর পরিমাণে এন্টি অক্সিডেন্ট এবং অ্যামিনো এসিড থাকায় এটি ত্বকের এবং চুলের জন্য খুব উপকারী। সবজির চেয়ে সজিনার পাতার গুণাগুণ আরও বেশি। সজনার ডাটা ও পাতার এতই পুষ্টিগুন যা মুঠোফোনে বিস্তারিত বলার নয়। তিনি এ বিষয়ে জেলা ও উপজেলা স্বাস্থ্য দপ্তর থেকে বিস্তারিত জানা যাবে বলে অবগত করেন।
মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট আঞ্চলিক গবেষনাগারের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা সাইফুর রহমান প্রতিবেদককে জানান, দিনাজপুর জেলা সদর সহ ১৩ উপজেলায় অনেক এলাকার মাটিই সজনা গাছ রোপনের উপযোগী। তথাপি কেউ যদি বানিজ্যিক ভাবে সজনা বাগান করায় আগ্রহী হন, তারা সজনা বাগান করার আগে মাটি পরীক্ষা করতে তার দপ্তরের সহযোগিতা নেওয়ার আহবান জানান।

দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো: নুরুজ্জামান জানান, সজনা গাছ রোপনে দিনাজপুরের সব উপজেলায় কৃষি কর্মকর্তাদের চাষীদের উৎসাহিত করতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
দিনাজপুরের সিনিয়র কৃষি বিপনন কর্মকর্তা রবিউল হাসান বলেন, সজনা ডাটা ও সজনা পাতার চাহিদা ব্যাপক বেড়েছে। দিনাজপুরের যেকোন জায়গায় সজনা বানিজ্যিক ভাবে চাষ করলে, পন্য বাজাতকরনে সজনা চাষীদের সহযোগিতা করা হবে।

বিরামপুর উপজেলা কৃষি অফিসার কমল কৃষ্ণ রায় বলেন, বিরামপুরের বেশীর ভাগ জমি সজনা গাছ লাগানো বা বাগান করার জন্য উপযোগী। ব্যক্তিগত ভাবে বা বানিজ্যিক ভাবে সজনা গাছ রোপনে তিনি কৃষকদের উৎসাহিত করে চলেছেন। এ বিষয়ে কৃষি দপ্তর কোন প্রকল্প গ্রহন করলে এলাকায় সজনা চাষে বিপ্লব ঘটবে। সজনা চাষীরা আর্থিক ভাবে লাভবান হবে।
শহরের শালবাগান এলাকার সজনা চাষী মনিরুল ইসলাম জানান,তিনি ভারতের চেন্নাই থেকে উন্নত জাতের সজনা বীজ এনেছিলেন। ফলন ভালই হয়েছে, এক-একটা সজনা লম্বায় ৩ ফিটের অধিক হয়ে থাকে। এই উন্নত জাতের সজনা গাছ পরবর্তীতে তার গ্রামের বাড়ী উপজেলার দক্ষিণ শাহাবাজপুর বড় গ্রামে ২টি সজনা গাছ লাগিয়েছেন। যাদের উচু জমি রয়েছে, বানিজ্যিক ভাবে সজনা বাগান করলে সজনা ডাটা ও এর পাতা বিক্রি করে অন্যান্য ফলনের চেয়ে কয়েকগুন বেশী লাভবান হবে।

বিরামপুর উপজেলার পলিপ্রয়াগপুর ইউনিয়নের দূগাপুর কামার পাড়া সজনা গ্রামে গিয়ে দেখা যায় প্রতিটি বাড়ীর সামনে ছোট-বড় সজনার গাছ । উপকারভোগেী আনিছুর রহমান ও সাবিনা ইয়াসমিন জানান, কয়েক বছর আগে উপজেলা কৃষি অফিস প্রতিটি বাড়ীর সামনে সরকারী ভাবে চারা রোপন করেন। তার ফল এখন তারা ভোগ করছেন, সজনা নিজেরা খাচ্ছেন আবার বিক্রি করে ভালো দামও পাচ্ছেন। তবে তারা বলেছেন বারোমাসি সজনা গাছ লাগালে আরও ভাল দাম পাওয়া যাবে।
বিরামপুর উপজেলা চত্বরের সামনে কলেজিয়েট স্কুল পাড়ায় প্রায় ১ একরের বেশী জমিতে সমবায় ভিত্তিতে সজনা বাগান হয়েছে। এখানকার প্রতিটি বাড়ীর পক্ষ থেকে ২ থেকে ৫ সজনা গাছ লাগানো হয়েছে, জানিয়েছেন স্কুলের সামনের দোকানী আনিছুর রহমান। তিনি জানান, এই সম্পতি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আদালতে মামলা চলছে। কোন পক্ষই যাতে জমি নিয়ে গন্ডগোল করতে না পারে, সে লক্ষ্যে উভয় পক্ষের সম্মতিতে ঐক্যমতের ভিত্তিতে সামাজিক ভাবে সজনা বাগানটি হয়েছে, ২ শতাধিক সজনা গাছ রয়েছে। তিনি বলেন, নিজেরা খাবার পরও বাজারে সজনা বিক্রি করে ভাল টাকা পান।

শহরের পলাশবাড়ী রেলগেট থেকে ঘোড়াঘাট রেলগেট পর্যন্ত রেল লাইনের দুপাশে সরকারী জমিতে দুই শতাধিক সজনা গাছ লাগিয়েছেন ভুমিহীন তৈমূর নামে এক উদ্যোক্তা। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ফলন শুরু হলে আধারে চুরি করে নিয়ে যায় অনেকে, আবার সজনা গাছ গুলিও ভেঙ্গে দেয়।

বিরামপুরের রাইয়ান হেল্হ কেয়ার এন্ড রিসোর্স সেন্টারের পুষ্টিবিদ লিনা আক্তার জানান, সজনা ডাটা ও সজনা পাতার বহু পুষ্টিগুন আছে। বিস্তারিত জানতে চাইলে আগ্রহীগনকে তার সাথে যোগাযোগ করতে বলেন।

কলাম লেখক : সাংবাদিক ও সম্পাদক- পজিটিভ বিডি ২৪ নিউজ, সভাপতি- বিরামপুর প্রেসক্লাব, কলেজ বাজার, বিরামপুর।

১৬ Views
CATEGORIES
Share This