রবিবার, ২০শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

প্রাকৃতিক দুর্যোগে সবজির উৎপাদন কমে যাওয়ায় দাম বেড়েছে

প্রাকৃতিক দুর্যোগে সবজির উৎপাদন কমে যাওয়ায় দাম বেড়েছে

পজিটিভ বিডি নিউজ ২৪ডট কম  (রংপুর): জেলায় সাম্প্রতিক ভারি বর্ষণ আকস্মিক বন্যার মতো একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে সবজির উৎপাদন ব্যাপকভাবে কমে যাওয়ায় সরবরাহ শৃঙ্খলা প্রভাবিত হয়েছে ফলে সকল প্রকারের সবজির মূল্য বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষের ভোগান্তির সৃষ্টি হয়েছে
কৃষক, ব্যবসায়ী, কর্মকর্তা বিশেষজ্ঞদের মতে, রংপুর কৃষি অঞ্চলে কয়েক মাস আগে দীর্ঘ খরা সাম্প্রতিক ভারি বর্ষণের ফলে বন্যা দেখা দেওয়ায় নদনদী বেষ্টিত নিচু চর এলাকায় স্বল্পমেয়াদি সবজি উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে
রংপুর সদর উপজেলার পালিচড়া সরদারপাড়া গ্রামের কৃষক বেলাল মিয়া রবিউল ইসলাম বাসসএর সঙ্গে আলাপকালে জানান, তারা সাধারণত তাদের কৃষি জমিতে ধনে, করলা, মুলা, বেগুন, মরিচ, আলু কাকরোল চাষ করে থাকেন
বেলাল বলেন, ‘সাম্প্রতিক বর্ষণে বেগুন, মরিচ ধনিয়ার ক্রমবর্ধমান চারা সম্পূর্ণভাবে এবং মূলা আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে এর আগে খরায় করলা, কাকরোল বেগুনের বাড়ন্ত গাছের ক্ষতি হওয়ায় ফলন কম হয়েছিল
মিঠাপুকুর উপজেলার রানীপুকুর পূর্বপাড়া গ্রামের কৃষক ওয়াজেদ আলী আশরাফুল আলম জানান, সাম্প্রতিক বৃষ্টিতে মরিচ, করলা বেগুন সম্পূর্ণরূপে ক্ষতি হয়েছে এবং দুধকুশি, ঝিঙ্গা, কাকরোল, বরবটি, পটল, মরিচ, অফসিজন বাঁধাকপি, ফুলকপি শাকসবজির উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে
স্থানীয় ফড়িয়া আবু বকর, শহিদুল ইসলাম সোলায়মান আলী জানান, তারা কৃষকদের কাছ থেকে সবজি কিনে পাইকারি বাজারে ব্যবসায়ীদের কাছে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ লাভে বিক্রি করে থাকেন
মিঠাপুকুর উপজেলার জায়গীরহাট, সদর উপজেলার পালিচড়া রংপুর সিটি পাইকারি বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, সাম্প্রতিক ভারি বর্ষণ আকস্মিক বন্যায় উৎপাদন কম হওয়ায়, তাদের আড়তে দৈনিক সবজির সরবরাহ দুই থেকে তিন গুণ কমে গেছে
রংপুর সিটি পাইকারি বাজারের বীথি বাণিজ্যালয়ের স্বত্বাধিকারী মো. দেলোয়ার হোসেন বাসসকে জানান, ‘ব্যাপক চাহিদার বিপরীতে সবজির অপর্যাপ্ত সরবরাহের কারণে দাম বেড়ে গেছে
এর আগে তিনি তার পাইকারি দোকানে নিয়ে আসা স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত সবজি কেজিতে এক থেকে দুই টাকা হারে কমিশন নিয়ে কৃষক ফড়িয়াদের মাধ্যমে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি করতেন দোকান থেকে দিনে পাঁচ থেকে সাত টন সবজি বিক্রি হতো
দেলোয়ার বলেন, ‘বর্তমানে মাঠ পর্যায়ে উৎপাদন কমে যাওয়ায় তার পাইকারি দোকানে প্রতিদিনের সবজির সরবরাহ দুই থেকে তিন টনে নেমে গেছে
বিভিন্ন বাজারের খুচরা বিক্রেতারা জানান, তারা পাইকারি বাজারে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সবজি কিনে ভোক্তাদের কাছে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ লাভে বিক্রি করেন
ফড়িয়াদের কৃষকদের কাছ থেকে ক্রয়মূল্য পাইকারি বাজারে বিক্রির মূল্যের তুলনা করে দেখা যায়, বিভিন্ন ধরনের সবজিভেদে ফড়িয়ারা ১৫ থেকে ২৫ শতাংশ মুনাফা অর্জন করছেন
রংপুর সিটি বাজারের খুচরা বিক্রেতা হাফিজুর রহমান, পালিচড়া বাজারের বেলাল মিয়া, শাহিনুর ইসলাম জায়গীরহাট বাজারের রাশেদুল ইসলাম জানান, স্থানীয় প্রশাসন কর্র্তৃক ব্যাপক বাজার মনিটরিংয়ের কারণে গত দুই দিন ধরে কিছু কিছু সবজির দাম সামান্য কমতে শুরু করেছে
ভোক্তারা এখন এসব বাজারে প্রতি কেজি আলু ৫৫৭০ টাকা দরে, ঝিঙ্গা চিচিঙ্গা ৭০৭৫ টাকা, পটল ৭০ টাকা, বেগুন ৮০১৪০ টাকা, শসা ৬০১০০ টাকা, পেঁপে ৪০ টাকা, কাঁচা মরিচ ৩০০ টাকা, মূলা ৫০ টাকা, পেঁয়াজ ৯৫১১৫ টাকা এবং প্রতি কেজি রসুন ২৪০২৬০ টাকা দরে কিনছেন
হাফিজুর রহমান বলেন, ‘এছাড়া এখন প্রতি কেজি করলা ৮০১০০ টাকা, ফুলকপি ১০০ টাকা, বাঁধাকপি ৭০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৭৫ টাকা, ধনে ২৫০ টাকা, লাউ প্রতিটি ৮০ টাকা, প্রতি কেজি শিম ২৫০ টাকা, বরবটি ১০০ টাকা, কচুর বই ৬০ টাকা সজিনা প্রতি কেজি ২৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে
রংপুর অঞ্চলের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মো. ওবায়দুর রহমান মন্ডল বাসসকে বলেন, কয়েক মাস আগে খরা এবং সাম্প্রতিক ভারি বর্ষণ নদনদীর চর এলাকায় আকস্মিক বন্যায় সবজির উৎপাদন ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে
তিনি আরো বলেন, ‘ফলে, খরিফ এর পরে রবি মৌসুমের আগে বছরের এই সময়ে শাকসবজির উৎপাদন সরবরাহ অনেকাংশে কমে গেছে এর ফলে সরবরাহ চেইন প্রভাবিত হওয়ায় সাম্প্রতিক সপ্তাহে সবজির দাম বেড়েছে
কৃষি বিপণন অধিদফতরের সহকারী পরিচালক মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সাম্প্রতিক বন্যা বৃষ্টির কারণে সবজির উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে যার ফলে সরবরাহের অপ্রতুলতার কারণে দাম অনেক বেড়ে গেছে
রংপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল বলেন, ‘জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সঙ্গে স্থানীয় প্রশাসনের কঠোর বাজার মনিটরিং অভিযানের ফলে ডিম সবজির দাম এখন কমতে শুরু করেছে

২১৪ Views
CATEGORIES
Share This

COMMENTS