সোমবার, ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

সিলেটে আকস্মিক বন্যা, পাঁচ উপজেলায় খোলা হয়েছে আশ্রয়কেন্দ্র

সিলেটে আকস্মিক বন্যা, পাঁচ উপজেলায় খোলা হয়েছে আশ্রয়কেন্দ্র

পজিটিভ বিডি নিউজ ২৪ডট কম (সিলেট): মেঘালয়ের পাহাড়ি ঢল ও নদ নদীর পানি বাড়ায় সিলেটের সীমান্তবর্তী পাঁচ উপজেলায় আকস্মিক বন্যা দেখা দিয়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন প্রায় চার লাখ মানুষ।
এদিকে, প্লাবিত পাঁচ উপজেলা কানাইঘাট, জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ ও জকিগঞ্জে বন্যার্তদের জন্য ৪৭০টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চাল, শুকনো খাবার ও অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় সিলেটের সুরমা, কুশিয়ারা ও সারি নদীর পাঁচটি পয়েন্টে পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
সিলেট জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সিলেট জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও দুর্গত মানুষের খোঁজ নিতে জেলা প্রশাসক মো. কামরুল হাসান উপজেলাগুলোতে পরিদর্শন করেছেন। সেনাবাহিনীকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পাঁচ উপজেলার মানুষের জন্য দুইশ বস্তা করে মোট এক হাজার বস্তা শুকনো খাবার, ১৫ মেট্রিক টন করে ৭৫ মেট্রিক টন চাল, ৫০ হাজার টাকা করে আড়াই লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। প্রয়োজনে আরও ত্রাণ বরাদ্দ করা হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেট জানায়, সিলেটের নদনদীতে পানিবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। সুরমা নদী কানাইঘাট উপজেলা বিকেল ৩টায় বিপদসীমার ১৪৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল। একই সময়ে কুশিয়ারা নদীর পানি জকিগঞ্জের অমলসীদ পয়েন্টে বিপদসীমার ২১৭ সেন্টিমিটার এবং  শেওলা পয়েন্টে ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া, সারি গোয়াইন নদীর সারিঘাট পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ৬১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে এ সময় পানি প্রবাহিত হয়।
জৈন্তাপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী জানান, উপজেলার টিলা এলাকা ছাড়া বাকি  সব এলাকাই প্লাবিত হয়েছে। একটি জায়গায় ঢলের পানি সিলেট-তামাবিল সড়ক উপচে প্লাবিত হয়েছে, পরে নেমে গেছে। কোথাও কোথাও মানুষের বাড়ির ছাউনি পর্যন্ত পানিতে ডুবে গেছে। এতে লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘রাতে অন্ধকার ও প্রবল স্রোতের কারণে উদ্ধার তৎপরতায় সমস্যা হচ্ছিল। ভোর থেকে ব্যাপকভাবে উদ্ধার অভিযান চলছে। মানুষকে উদ্ধার করা গেলেও গৃহপালিত পশুপাখির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।’
গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘বন্যায় উপজেলার ৭৫ ভাগ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি। জাফলং-বিছনাকান্দিসহ সব পর্যটন এলাকার পর্যটকবাহী নৌকা নিয়ে উদ্ধার অভিযান চলছে। পর্যটকদের নিরাপদে থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আপাতত এসব পর্যটন কেন্দ্রে না যেতে বলা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘বন্যার পূর্বাভাস থাকায় আমরা আগেই ৫৬টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করে রেখেছিলাম। কাল রাতেই ১৬৭টি পরিবার আশ্রয় নেয়, সকাল থেকে যা ৩০০ ছাড়িয়েছে। অনেক মানুষ নিজের বাড়িঘর ছেড়ে পার্শ্ববর্তী উঁচু বাড়িঘরে আশ্রয় নিয়েছেন।’
সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ মোবারক হোসাইন বলেন, ‘বন্যা পরিস্থিতি কানাইঘাট, গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুর উপজেলায় সবচেয়ে খারাপ। স্থানীয়দের সহযোগিতায় উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছে উপজেলা প্রশাসন। সেনাবাহিনী ইতোমধ্যে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে জেলা ও উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির বৈঠক হয়েছে। উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে কন্ট্রোল-রুম খোলা হয়েছে। বন্যা-কবলিত মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসা হচ্ছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে সবার কাছে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া হবে।’

১০৫ Views
CATEGORIES
Share This

COMMENTS