শিক্ষা
ক্রম খাত ২০০৬ বিএনপি-জামাত জোট ২০২৩ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মন্তব্য
১ স্বাক্ষরতার হার ৪৫ শতাংশ ৭৬.৮ শতাংশ ২ গুণ বৃদ্ধি
২ প্রাথমিক শিক্ষায় মেয়েদের অংশগ্রহণ ৫৪ শতাংশ ৯৮.২৫ শতাংশ ২ গুণ বৃদ্ধি
৩ কারিগরী শিক্ষায় ভর্তির হার ০.৮ শতাংশ ১৭.৮৮ শতাংশ ২২ গুণ বৃদ্ধি
৪ মাধ্যমিক পর্যায়ে নারী শিক্ষকের সংখ্যা ৫৯ হাজার ৫৫ জন ১ লক্ষ ১ হাজার ৮২৮ জন ২ গুণ বৃদ্ধি
৫ প্রাথমিক বিদ্যালয় সংখ্যা ৬৫ হাজার ৬৭২টি ১ লক্ষ ১৮ হাজার ৮৯১টি প্রায় ২ গুণ বৃদ্ধি
৬ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সংখ্যা ৩ লক্ষ ৪৪ হাজার ৭৮৯ জন ৬ লক্ষ ৫৭ হাজার ২০৩ জন প্রায় ২ গুণ বৃদ্ধি (২০০৯ হতে ২০২২ পর্যন্ত মোট ২ লক্ষ ৩৮ হাজার ৩১১ জন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।)
৭ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মহিলা শিক্ষক সংখ্যা ১ লক্ষ ৫৩ হাজার ৪১ জন ৪ লক্ষ ৩ হাজার ১৯১ জন ৩ গুণ বৃদ্ধি
৮ কারিগরী প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (টিটিসি) ৯টি ১৬৬টি ১৮ গুণ বৃদ্ধি
আর্থিকখাতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা ও অপরাধ দমন
ক্স পুঁজি পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ক্স রাষ্ট্র ও সমাজের সকল স্তরে ঘুষ-দুর্নীতি উচ্ছেদ, অনুপার্জিত আয় রোধ, ঋণ-কর-বিল খেলাপি ও দুর্নীতিবাজদের বিচার ব্যবস্থার মাধ্যমে শাস্তি প্রদান এবং তাদের অবৈধ অর্থ ও সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হবে।
খ) দারিদ্র্য বিমোচন ও বৈষম্য হ্রাস
আমরা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হলে দারিদ্র্যের হার ১১ শতাংশে, চরম দারিদ্র্যের অবসান এবং ২০৪১ সাল নাগাদ দারিদ্র্যের হার ৩ শতাংশে নামিয়ে আনব।
গ) ‘আমার গ্রাম-আমার শহর’: প্রতিটি গ্রামে আধুনিক নগর সুবিধা সম্প্রসারণ
আমরা নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করলে পূর্বের ধারাবাহিকতায় উন্নত রাস্তাঘাট, যোগাযোগ, সুপেয় পানি, আধুনিক স্বাস্থ্যসেবা ও সুচিকিৎসা, মানসম্পন্ন শিক্ষা, উন্নত পয়ঃনিষ্কাশন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ বৃদ্ধি, কম্পিউটার ও দ্রুতগতিসম্পন্ন ইন্টারনেট সুবিধা, বৈদ্যুতিক সরঞ্জামসহ মানসম্পন্ন ভোগ্যপণ্যের বাজার সম্প্রসারণের মাধ্যমে প্রতিটি গ্রামকে আধুনিক শহরের সকল সুবিধা দেওয়ার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা অব্যাহত থাকবে। গ্রামের যুবসমাজের শহরমুখী হওয়ার প্রবণতা কমাতে গ্রামেই আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ঘ) তরুণ যুবসমাজ: ‘তারুণ্যের শক্তি-বাংলাদেশের সমৃদ্ধি’
নির্বাচিত হলে দেশের রূপান্তর ও উন্নয়নে আমরা তরুণ ও যুবসমাজকে সম্পৃক্ত রাখব। কর্মক্ষম, যোগ্য তরুণ ও যুবকদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সম্প্রসারণ, জেলা ও উপজেলায় ৩১ লাখ যুবকের প্রশিক্ষণ প্রদান এবং তাদের আত্মকর্মসংস্থানের জন্য সহায়তা প্রদান কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।
ঙ) কৃষি, খাদ্য ও পুষ্টি
আমাদের সরকার কৃষির জন্য সহায়তা ও ভর্তুকি তথা কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে কৃষি উপকরণে বিনিয়োগ সহায়তা প্রদান অব্যাহত রাখবে।
ব্যবহারযোগ্য কৃষি যন্ত্রপাতি সহজলভ্য ও সহজপ্রাপ্য করা হবে। কৃষি যন্ত্রপাতিতে ভর্তুকি প্রদান অব্যাহত থাকবে।
বাণিজ্যিক কৃষি, জৈবপ্রযুক্তি, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, রোবোটিকস, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, ন্যানো-টেকনোলজিসহ গ্রামীণ অকৃষিজ খাতের উন্নয়ন ও বিশ্বায়ন মোকাবিলায় উপযুক্ত কর্মকৌশল গ্রহণ করা হবে। কৃষির আধুনিকায়ন, প্রযুক্তি উদ্ভাবন এবং কৃষি গবেষণার সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ অব্যাহত থাকবে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ
২০২৮ সালের মধ্যে গবাদিপশুর উৎপাদনশীলতা ১.৫ গুণ বৃদ্ধি করা হবে। বাণিজ্যিক দুগ্ধ, পোল্ট্রি ও মৎস্য খামার প্রতিষ্ঠা, আত্মকর্মসংস্থান বৃদ্ধি এবং দারিদ্র্য দূরীকরণে সহজ শর্তে ঋণ, প্রয়োজনীয় ভর্তুকি, প্রযুক্তিগত পরামর্শ ও নীতিগত সহায়তা প্রদান করা হবে।
চ) শিল্প উন্নয়ন
দেশের শ্রমশক্তিতে প্রতি বছর নতুন যুক্ত হওয়া ২০ লাখেরও বেশি মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা আওয়ামী লীগের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য। এটি অর্জনে আমরা ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছি। নতুন নতুন শিল্প স্থাপন করে আমরা শিল্পখাতের বিকাশ ঘটাবো। নির্বাচিত হলে উদ্যোক্তা শ্রেণিকে আকৃষ্ট করতে আমরা যথোপযুক্ত নীতি প্রণয়ন ও কর্মসূচি গ্রহণ করবো।
কর্মসংস্থান সম্প্রসারণের জন্য ক্ষুদ্র, মাঝারি ও কুটির শিল্প, তাঁত ও রেশমশিল্পকে সংরক্ষণ এবং প্রতিযোগিতা সক্ষম করা হবে। বেনারসি ও জামদানিশিল্পকে উৎসাহিত করা হবে।
চামড়া ও পাটপণ্যে বৈচিত্র্য আনা হবে এবং এই শিল্পগুলিকে লাভজনক করার উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে। পাটশিল্পে বেসরকারি খাতের উদ্যোগ উৎসাহিত করা হবে।
কামার, কুমার ও মৃৎশিল্পীদের উন্নয়নের জন্য বিশেষ উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে। প্রয়োজন অনুসারে এখাতে প্রণোদনা দেওয়া হবে।
ছ) বিদ্যুৎ ও জ্বালানি
বিদ্যুৎ খাতে আমরা গত ১৫ বছরে যুগান্তকারী ও বৈপ্লবিক উন্নয়ন ঘটিয়েছি। নিরবচ্ছিন্ন ও মানসম্মত বিদ্যুৎ এবং জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত, এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার ও ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করার দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
পরিবেশবান্ধব জ্বালানি থেকে ১০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে। নবায়নযোগ্য ও পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদিত বিদ্যুৎ সঞ্চালনের জন্য গ্রিড যুগোপযোগী করার কাযক্রম শুরু হয়েছে।
জ্বালানি খাত
দেশের উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলে গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গ্যাস ও এলপিজির সরবরাহ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করা হবে।
জ) যোগাযোগ
রূপকল্প-২০৪১ অর্জনে আওয়ামী লীগ সরকার নিরাপদ, মানসম্পন্ন ও উন্নয়নবান্ধব উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে বিগত ১৫ বছরে ব্যাপক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছে।
নৌপথ, সড়কপথ, রেলপথ ও বিমানের উন্নয়ন অব্যাহত থাকবে। নিরাপদ যোগাযোগ ব্যবস্থা রাজধানী থেকে গ্রাম পর্যন্ত উন্নত করা হবে।
ঝ) অবকাঠামো উন্নয়নে মেগা প্রজেক্ট
আওয়ামী লীগ সরকার ৩ মেয়াদে বিভিন্ন মেগা প্রজেক্ট গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করেছে। আশা করা যায়, জাতির অহংকার ও গর্বের প্রতীক পদ্মা সেতুসহ এই সকল প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সুফল বয়ে আনছে।
ঞ) সুনীল অর্থনীতি
সমুদ্র সম্পদ আর্থ সামাজিক উন্নয়নে যথাযথভাবে কাজে লাগানোর উদ্দেশ্যে সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেছি। সমুদ্র সম্পদ তেল, গ্যাস, খনিজ, মৎস্য ও জলজ সম্পদ আহরণ করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
সমুদ্র বন্দর ও গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করা হয়েছে; যা ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণে সুযোগ সৃষ্টি করেছে।
ট) এমডিজি অর্জন এবং এসডিজি বাস্তবায়ন কৌশল (২০১৬-৩০)
আমরা এমডিজি অত্যন্ত সফলতার সাথে বাস্তবায়ন করেছি। টেকসই উন্নয়ন বাস্তবায়ন অর্থাৎ এসডিজি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বাসস্থান, খাদ্য নিরাপত্তা, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, সুপেয় পানি, স্যানিটেশন সুবিধা, শিশু ও মাতৃমৃত্যু হার হ্রাস, জেন্ডার সমতা নিশ্চিতকরণসহ প্রয়োজনীয় সকল ক্ষেত্রে সাফল্যের সাথে বাস্তবায়ন শুরু করেছি। আর্থ সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে বৈশ্বিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে নতুন কৌশল উদ্ভাবন ও বাস্তবায়নের পদক্ষেপ গ্রহণ করে যাচ্ছি।
ঠ) ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০
জাতীয় উন্নয়নের সঙ্গে সংগতিপূর্ণভাবে ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০ এর লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে: ১. ২০৩০ সালের মধ্যে চরম দারিদ্র্য দূরীকরণ; ২. ২০৩০ সালের মধ্যে উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশের মর্যাদা অর্জন এবং ৩. ২০৪১ সাল নাগাদ একটি উন্নত-সমৃদ্ধ দেশের মর্যাদা অর্জন।
ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০ এর কাঙ্খিত লক্ষ্য হচ্ছে ৬টি। এগুলো হলো: ১. বন্যা ও জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত বিপর্যয় থেকে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা; ২. পানি ব্যবহারে অধিকতর দক্ষতা ও নিরাপদ পানি নিশ্চিত করা; ৩. সমন্বিত ও টেকসই নদী অঞ্চল এবং মোহনা ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা; ৪. জলবায়ু ও বাস্তুতন্ত্র সংরক্ষণ এবং সেগুলোর যথোপযুক্ত ব্যবহার নিশ্চিত করা; ৫. অন্তঃ ও আন্তঃদেশীয় পানিসম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য কার্যকর প্রতিষ্ঠান ও সুশাসন গড়ে তোলা এবং ৬. ভূমি ও পানিসম্পদের সর্বোত্তম সমন্বিত ব্যবহার নিশ্চিত করা।
৩.৪ সামাজিক নিরাপত্তা ও সেবা
ক) সর্বজনীন পেনশন: সময়োপযোগী উদ্যোগ
২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন প্রণীত হয় এবং ২০২৩ সালের ১৭ আগস্ট মাসে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার উদ্বোধন করা হয়।
এটি সমাজের সকলের জন্য। এতে রয়েছে ৪টি স্কিম: ১. প্রবাসী বাংলাদেশী নাগরিকদের জন্য ‘প্রবাস’; ২. ব্যক্তি মালিকানাধীন/বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা/কর্মচারীদের জন্য ‘প্রগতি’; ৩. স্বকর্মে নিয়োজিত নাগরিকদের জন্য ‘সুরক্ষা’ এবং ৪. স্বকর্মে নিয়োজিত অতি দরিদ্রদের জন্য ‘সমতা’।
নিজেদের ভবিষ্যৎ জীবন সুরক্ষার লক্ষ্যে এই সুযোগ সকল নাগরিকদের গ্রহণ করতে আহ্বান জানাচ্ছি।
খ) শিক্ষা
মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ ও মানবিক গুণাবলিসম্পন্ন এবং চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার লক্ষ্যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিজ্ঞানে সমৃদ্ধ দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তুলতে আমরা নিরলস কাজ করে যাচ্ছি।
নির্বাচিত হলে আওয়ামী লীগ সরকার নিষ্ঠার সঙ্গে সংবিধানের ১৭ অনুচ্ছেদে শিক্ষানীতির লক্ষ্য অনুসরণ ও বাস্তবায়ন করবে।
শিক্ষার উন্নয়ন ও বিকাশ হলে সামগ্রিক জাতীয় উন্নয়ন এবং দারিদ্র্য নিরসনে গতিবেগ সঞ্চারিত হয়। এই বিশ্বাস থেকে আওয়ামী লীগ শিক্ষাখাতে বরাদ্দ বাড়াবে এবং তার কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত করবে।
প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষায় নারী শিক্ষকের অনুপাত ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকবে। স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে ভাষা, উচ্চতর গণিত ও বিজ্ঞান শিক্ষাকে অধিকতর গুরুত্ব প্রদান করা হবে। বিজ্ঞান শিক্ষার জন্য উপযুক্ত ল্যাবরেটরি গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত সম্প্রসারণ করা হবে। মেধাবী বিজ্ঞান ও গণিতের শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ বৃত্তি প্রদান করা হচ্ছে।
মাদ্রাসা শিক্ষাকে যুগোপযোগী করতে যথাযথ শিক্ষা পাঠক্রম প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন হাতে নেওয়া হয়েছে। নারী শিক্ষা প্রসারের সঙ্গে সংগতি রেখে উপবৃত্তি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। দরিদ্র ও দুর্বলতর জনগোষ্ঠীর সন্তানদের উচ্চশিক্ষা লাভের সুযোগ আরও প্রসারিত করা হবে।
গ) স্বাস্থ্যসেবা ও পরিবার কল্যাণ
রূপকল্প-২০২১ এর ধারাবাহিকতায় রূপকল্প-২০৪১ এর কর্মসূচিতে মৌলিক স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ সেবা উন্নত ও সম্প্রসারিত হবে।
কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা ও বিনামূল্যে ঔষধ বিতরণ অব্যাহত থাকবে। ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য দেশের প্রত্যেক মানুষের কাছে একটি ইউনিক হেলথ আইডি প্রদান এবং হাসপাতালে অটোমেশন ব্যবস্থাপনা চালু করা হবে। সকলের জন্য সমান সুযোগ রেখে সর্বজনীন স্বাস্থ্য ব্যবস্থা চালু করা হবে। ঢাকায় আন্তর্জাতিকমানের সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল স্থাপন করেছি। স্বাস্থ্য বিজ্ঞান গবেষণায় বিশেষ বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
স্বাস্থ্য ইনস্যুরেন্স চালু, হেলথি এজিং স্কিমের আওতায় প্রবীণদের অসংক্রামক রোগব্যাধি নিরাময় এবং পুনর্বাসন কেন্দ্র তৈরি করা হবে।
দেশে এপিআই একটিভ ফার্মাসিউটিক্যাল ইনগ্রেডিয়েন্ট শিল্প উৎসাহিত করা হবে। এন্টি বায়োটিক ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা হবে।
সকল স্তরে মানসিক স্বাস্থ্য ও অটিজম স্বাস্থ্যসেবা প্রদান অধিকতর কার্যকর করা হবে।
ঘ) সংস্কৃতি
সংস্কৃতির চর্চা ও বিকাশে পরিপূর্ণ সহযোগিতা করতে আওয়ামী লীগ অঙ্গীকারবদ্ধ। আওয়ামী লীগ বিশ্বাস করে- সংস্কৃতির ভেতর দিয়েই সভ্যতা, মানবতা, বিশ্বজনীনতা ও জাতীয়তা সমৃদ্ধ ও বিকশিত হয়।
বাঙালি সংস্কৃতির আবহমান ঐতিহ্য ধারণ ও বিশ্ব সংস্কৃতির সঙ্গে মেলবন্ধন রচনার লক্ষ্যে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য, সংগীত, শিল্পকলা, নাটক, চলচ্চিত্র এবং সৃজনশীল সুকুমারশিল্পের উৎকর্ষ সাধনে আমরা পৃষ্ঠপোষকতা অব্যাহত রাখবো।
সকল ধর্মের শিক্ষা ও মূল্যবোধের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন এবং সামাজিক সচেতনতা, বিজ্ঞানমনস্কতা, সংস্কৃতির চর্চা ও উদার মানবিক চেতনা সৃষ্টির ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হবে।
লোকসংস্কৃতি ও লোকঐতিহ্য এবং নৃগোষ্ঠীর ভাষা, সংস্কৃতি ও জীবনধারার বৈশিষ্ট্যসমূহ সুরক্ষা করা হবে।
ঙ) ক্রীড়া
প্রত্যেক উপজেলায় মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ কাজ চলছে। সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে ক্রীড়া ক্লাব গড়ে তুলে বিনা মূল্যে ক্রীড়াসামগ্রী বিতরণ অব্যাহত থাকবে। ইউনিয়ন পর্যায়ে খেলার মাঠের উন্নয়ন, ক্রীড়া অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি, খেলোয়াড়, কোচ, কর্মকর্তাসহ ক্রীড়াসংশ্লিষ্ট সকলের প্রশিক্ষণ সুবিধাদি সম্প্রসারণে পরিকল্পিত উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
প্রচলিত গ্রামীণ ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলাকে দেশব্যাপী জনপ্রিয় করে তোলা, আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে ক্রিকেট, ফুটবল, হকি, শুটিং, আর্চারি, কাবাডিসহ সম্ভাবনাময় খেলাধুলাকে বিশ্বমানে উন্নীত করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
চ) শ্রমিক কল্যাণ ও শ্রম নীতি
আইএলও কনভেনশন এবং আইনে প্রদত্ত শ্রমিক অধিকার ও কল্যাণমূলক শর্তাবলি পালন অব্যাহত থাকবে। নারীর শ্রমে অংশগ্রহণের বাধা দূর করা এবং নারী শ্রমিক সংগঠন সুসংহত করা হবে। পরিবেশবান্ধব গ্রিন শিল্প কারখানা গড়ে তোলা হয়েছে। পোশাক শিল্প কারখানায় ডে-কেয়ার সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। মাতৃত্বকালীন ছুটির ব্যবস্থা করেছি।
গার্মেন্টস শ্রমিকরা ১৯৯৬ সালে ৮০০ টাকা মজুরী পেত; আওয়ামী লীগ সরকার তা বাড়িয়ে ১৬০০ টাকা করে। পরবর্তীতে ২০০৯-২০২৩ মেয়াদে আমরা এ মজুরী ১২ হাজার ৫০০ টাকায় বৃদ্ধি করি।
ট্রেড ইউনিয়ন গঠন ও পরিচালনার অধিকার, কর্মক্ষেত্রে নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ, বিধিসম্মত শ্রমঘণ্টা নির্ধারণ, নিয়োগের নিরাপত্তা, কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনার জন্য ক্ষতিপূরণ, স্বাস্থ্যসেবা, বাসস্থান, চিত্তবিনোদন এবং শ্রম আইনে নির্ধারিত শ্রমিক কল্যাণ ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্তির নিশ্চয়তা প্রদান অব্যাহত রাখা হবে।
বৈদেশিক কর্মসংস্থান
আমরা দক্ষ শ্রমশক্তি রপ্তানি বৃদ্ধিতে আন্তর্জাতিক চাহিদা অনুযায়ী ট্রেডভিত্তিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা বৃদ্ধি করবো। বিদেশে কর্মরত শ্রমিকদের আইনসংগত সহায়তার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা অব্যাহত রাখবো। বিদেশে নারী শ্রমিকদের প্রতি ন্যায্য আচরণ সংরক্ষণে আইনসংগত ব্যবস্থা নিব।
ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসীদের আয় গ্রহণ সহজ করার জন্য মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে।
ছ) নারীর ক্ষমতায়ন
ক্স নারীর ক্ষমতায়ন, জেন্ডার সমতা, অর্থনৈতিক সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং নারী উন্নয়নে সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টির কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। গ্রামীণ নারীদের সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন এবং শ্রমে অংশগ্রহণের সুযোগ বৃদ্ধি করা হবে। গ্রামীণ নারীদের অন-লাইনে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ট্রেনিং দেওয়া হচ্ছে।
ক্স আওয়ামী লীগ সরকার নারী ও শিশু পাচার রোধে আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করেছে, যা অধিকতর সক্রিয় ও কার্যকর করা হবে।
ক্স শিল্প-ব্যবসা-বাণিজ্যে নারীদের আরও বেশি অংশগ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া অব্যাহত থাকবে।
ক্স নারী উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী গড়ে তোলার কাজে ‘জয়িতা ফাউন্ডেশন’ এর কার্যকর ভূমিকা সম্প্রসারিত হবে।
জ) শিশু কল্যাণ
আমরা শিশু-কিশোরদের ভবিষ্যতের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে যথাযথ শারীরিক ও মানসিক বিকাশে পুষ্টি, শিক্ষা ও বিনোদনের উপযুক্ত সুযোগ সৃষ্টি করার কার্যক্রম অব্যাহত রাখব।
পথশিশুদের পুনর্বাসন ও নিরাপদ আবাসন, হতদরিদ্র ও ছিন্নমূল শিশুদের জন্য শিশুসদন প্রতিষ্ঠা এবং প্রাথমিক ও বৃত্তিমূলক শিক্ষাদানের কর্মসূচি কার্যকর ও প্রসারিত করা হবে।
শিশুশ্রম বন্ধ করার জন্য পর্যায়ক্রমে সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ার কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে।
কন্যা শিশুদের প্রতি বৈষম্য, নির্যাতন বন্ধ ও তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য আইন পাশ করা হয়েছে।
অটিস্টিক শিশুদের জন্য গৃহীত বিশ্বে সমাদৃত কার্যক্রমের পরিধি বাড়ানো হবে।
ঝ) মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণ
মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। নির্বাচিত হলে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় অসঙ্গতি দূর এবং প্রয়োজনীয় সংশোধন করার কাজ অব্যাহত রাখব।
আওয়ামী লীগ সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের অবদানের স্বীকৃতি এবং তাঁদের জন্য যেসব কল্যাণমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে, সেগুলো অব্যাহত রাখা হবে।
ঞ) বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ও প্রতিবন্ধী কল্যাণ
বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন ও জাতীয় কর্মপরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করার সুযোগ সম্প্রসারণ করা হবে। “বঙ্গবন্ধু প্রতিবন্ধী সুরক্ষা বীমা” চালু করা হয়েছে।
বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুরা যাতে তাদের জন্য উপযোগী পরিবেশে শিক্ষা লাভ করতে পারে, সে ব্যবস্থা ও পদক্ষেপ গ্রহণ এবং সরকারি পরিষেবার দপ্তরগুলো প্রতিবন্ধীবান্ধব হিসেবে রূপান্তরের কাজ অব্যাহত থাকবে।
প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মোবাইল ফোন বা অনলাইনে ভাতা প্রদান করা হচ্ছে।
ব্যবসা ও শিল্প কারখানায় প্রতিবন্ধীদের চাকুরি প্রদান করা হলে ঐসব প্রতিষ্ঠানে কর ছাড় এবং বিশেষ প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে।
প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতায়ন করার লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোতে তাদের অংশগ্রহণের জন্য এবং ভোটদানে উৎসাহিত করা হবে।
প্রবীণ কল্যাণ
আমরা প্রবীণদের ক্রিয়াশীল রাখতে, সমাজ ও রাষ্ট্রের অগ্রগতিতে তাদের অবদান যোগ করতে এবং তাঁদের সুরক্ষায় সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি।
প্রবীণ নাগরিকদের ডিজিটাল প্রযুক্তির সকল সুযোগ-সুবিধা ও প্রযুক্তিগত সমতা অর্জনে এবং প্রবীণদের কল্যাণে উন্নত ও আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিতে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
ঢাকার আগারগাঁও-এ প্রবীণ হাসপাতাল রয়েছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ইতোমধ্যে জেরিয়াট্রিক সেবা চালু হয়েছে। দেশের সকল সরকারি হাসপাতালে জেরিয়াট্রিক সেবা প্রচলনের কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
ট) ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃ-গোষ্ঠী ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু
সংবিধানের আলোকে সকলের অধিকার সুরক্ষায় উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে জাতীয় সংসদে অর্পিত সম্পত্তি আইন সংশোধন করা হয়েছে এবং অর্পিত সম্পত্তি সংশ্লিষ্ট সমস্যা নিষ্পত্তির ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আইন প্রয়োগে বাধা দূর করা হবে।
সংখ্যালঘুদের স্বার্থ সুরক্ষার জন্য জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন এবং সংখ্যালঘু বিশেষ সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করা হবে। আওয়ামী লীগ ধর্মীয় সংখ্যালঘু, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও অনগ্রসর সম্প্রদায়ের জীবন ও জীবিকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আবশ্যক পদক্ষেপ নেওয়া অব্যাহত রাখবে।
ঠ) অনগ্রসর জনগোষ্ঠী
দলিত ও অবহেলিত জনগোষ্ঠী
দলিত ও হরিজনদের ফ্লাট নির্মাণ করে আবাসন সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। বস্তিবাসীর জন্য ফ্লাট নির্মাণ করে দেওয়া হচ্ছে। বিনামূল্যে দুই কাঠা জমি ও বাড়ী নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে।
আমাদের অঙ্গীকার
কুষ্ঠরোগী, বেদে ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি অব্যাহত রাখা হবে।
বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বেদে ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর দক্ষতা বৃদ্ধি করা হবে। যাতে তারা
আয়বর্ধনমূলক কর্মকা-ে সম্পৃক্ত হয়ে সমাজের মূল স্রোতোধারায় আসতে পারে।
হিজড়া জনগোষ্ঠী
হিজড়াদের সমাজের মূলধারায় অন্তর্ভুক্ত এবং তাদের মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ, সামাজিক ন্যায়বিচার, শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, বাসস্থান ও জীবনমান উন্নয়ন এবং সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।
হিজড়া জনগোষ্ঠীর জন্য নগদ সাহায্য ও বিনামূল্যে জমি ও বাসস্থান প্রদান কর্মসূচি সারা দেশে সম্প্রসারিত করা হবে।
ড) জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ সুরক্ষা
গ্লোবাল ক্লাইমেট রিস্ক ইনডেক্স ২০২১ অনুযায়ী বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ১০টি দেশের মধ্যে ৭ম অবস্থানে রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত চ্যালেঞ্জ সাফল্যের সঙ্গে মোকাবিলা করা ও খাপ খাইয়ে চলা বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় ভৌত-প্রাকৃতিক চ্যালেঞ্জ।
আমাদের অঙ্গীকার
জলবায়ু পরিবর্তন ও বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাব থেকে বাংলাদেশকে রক্ষা, দূষণমুক্ত পরিবেশ গড়ে তোলা এবং পানিসম্পদ রক্ষায় ইতোমধ্যে আমাদের সরকার যে সকল নীতি ও পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে, তার বাস্তবায়ন অব্যাহত থাকবে।
জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবিলার জন্য নি¤œলিখিত কর্মসূচি বাস্তবায়ন অব্যাহত থাকবে: (ক) উৎপাদনশীল/সামাজিক বনায়ন ২০ শতাংশে উন্নীত; (খ) ঢাকা ও অন্যান্য বড় নগরে বায়ুর মান উন্নয়ন; (গ) শিল্পবর্জ্য শূন্য নির্গমন/নিক্ষেপণ প্রবর্ধন; (ঘ) আইনসংগতভাবে বিভিন্ন নগরে জলাভূমি সংরক্ষণ, পুনরুদ্ধার ও সুরক্ষা; (ঙ) সমুদ্র উপকূলে ৫০০ মিটার বিস্তৃত স্থায়ী সবুজ বেষ্টনী গড়ে তোলা।
ঢ) এনজিও ও সরকার
সকল বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সরকারের বিধি অনুযায়ী নিবন্ধিত হবে। সরকার তাদের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ ও মূল্যয়ন করবে।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহ তাদের নিজস্ব বিধি মোতাবেক পরিচালিত হবে। দারিদ্র বিমোচন, আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও ক্ষুদ্র ঋণ প্রদান বিষয়ে নিজস্ব বিধি ও রীতি অনুযায়ী কাজ করার অধিকার অব্যাহত রাখা হবে।
অর্থায়নকারী অন্যান্য এনজিও’র সকল কার্যক্রম ও আয়-ব্যয়ের হিসাব স্বচ্ছ এবং স্থানীয় জনগণ ও সরকারি নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।
৩.৫ স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব
ক) পররাষ্ট্র
যুদ্ধ না, শান্তিতে আমরা বিশ্বাসী। জাতির পিতার নির্দেশিত ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’ এই নীতিকে ধারণ করে আওয়ামী লীগের সফল পররাষ্ট্রনীতির কল্যাণে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এক শক্তিশালী ও মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছে।
নির্বাচিত হলে সকল দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগিতা চলমান থাকবে। আন্তঃসীমান্ত যোগাযোগ, ট্রানজিট, জ্বালানি অংশীদারত্ব এবং ন্যায়সঙ্গত পানিবণ্টনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিবেশী দেশসমূহের সঙ্গে সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।
বাংলাদেশ তার ভূখ-ে জঙ্গি, আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী এবং বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর উপস্থিতি রোধে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। সমগ্র অঞ্চল থেকে এর মূলোৎপাটনের লক্ষ্যে, সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় দক্ষিণ এশিয়া টাস্কফোর্স গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে আওয়ামী লীগ সরকার।
খ) প্রতিরক্ষা: নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা
দেশের নিরাপত্তা, সার্বভৌমত্ব এবং অখ-তা রক্ষায় সশস্ত্র বাহিনীর প্রতিরক্ষা সামর্থ্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কর্তৃক প্রণীত ‘প্রতিরক্ষা নীতিমালা, ১৯৭৪’-এর আলোকে ‘ফোর্সেস গোল-২০৩০’ প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন চলমান রয়েছে।
আমাদের অঙ্গীকার
ফোর্সেস গোল ২০৩০ এর আলোকে প্রতিরক্ষা বাহিনীর দক্ষতা ও শৃঙ্খলা বৃদ্ধি এবং ব্যবস্থাপনার উন্নতি অব্যাহত থাকবে।
সশস্ত্র বাহিনীর অফিসার ও সৈনিকদের পেশাগত দক্ষতা এবং তাঁদের চাকরির সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির লক্ষ্যে দেশের সামর্থ্য অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ অব্যাহত থাকবে।
দেশ ও জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সক্ষমতা বৃদ্ধি অব্যাহত রাখা হবে। সশস্ত্র বাহিনীর সকল শ্রেণির সদস্যদের জন্য কল্যাণমুখী নতুন প্রকল্প ও কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে।
সুধিবৃন্দ,
আন্তরিকতা ও নিষ্ঠা থাকা সত্ত্বেও সরকার পরিচালনা করতে গিয়ে সবসময়ই যে আমরা শতভাগ সফল হয়েছি, এমন দাবি করবো না। তবে, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কথামালার রাজনীতিতে বিশ্বাসী নয়। আমরা যা বলি তা বাস্তবায়ন করি। ২০০৮, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনি ইশতেহার বাস্তবায়ন তার প্রমাণ। তবে মাঝে-মধ্যে মনুষ্য-সৃষ্ট, প্রাকৃতিক এবং বৈশ্বিক বাধাবিপত্তি আমাদের চলার গতিপথকে মন্থর করেছে। ২০১৩-১৬ সময়ে বিএনপি-জামাতের অগ্নি-সন্ত্রাস এবং জঙ্গিবাদ বিস্তারের চেষ্টা মোকাবিলা করে আমাদের এগিয়ে যেতে হয়েছে। ২০০৯ সালের পর থেকে বেশ কয়েকটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করতে হয়েছে। সবচেয়ে বড় আঘাত এসেছে ২০২০ সালে যখন বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস মহামারি ছড়িয়ে পড়ে। এই মহামারি গোটা বিশ্বের অর্থনীতি এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে তছনছ করে দিয়েছিল।
আমাদের সরকার একবিংশ শতাব্দীর এই ভয়াবহ মহামারি সফলভাবে মোকাবিলা করার পাশাপাশি অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে সক্ষম হয়েছে। তবে করোনাভাইরাস মহামারির ধকল কাটতে না কাটতেই প্রথমে শুরু হয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং এ বছর ইজরাইল-ফিলিস্তিন যুদ্ধ। যেকোন যুদ্ধ শুধু দুই প্রতিবেশির সমরাস্ত্র ব্যবহারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না।
যেমন: রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ সমরাস্ত্র যুদ্ধের পাশাপাশি ভয়াবহ বৈশ্বিক অর্থনৈতিক যুদ্ধে রূপান্তরিত হয়েছে। অবরোধ-পাল্টা অবরোধের ফলে গোটা বিশ্বের অর্থনীতির টালমাটাল অবস্থা হয়েছে। আমাদের মত উন্নয়নশীল দেশগুলোকে অধিক মূল্যে পণ্য ক্রয় ও আমদানি করতে বাধ্য করা হচ্ছে। দেশীয় মুদ্রার মানের ব্যাপক অবনতিতে মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধি পেয়েছে। যার প্রভাব পড়েছে দ্রব্যমূল্য এবং মানুষের জীবনযাপনের ওপর। বহুমুখী ও সর্বাত্মক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও আমরা অনেক সময় নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্য বৃদ্ধি রোধ করতে পারিনি। এ সমস্যা শুধু আমাদের দেশের নয়, এ সমস্যা ধনী-গরিব সকল দেশের। তবে, আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনির আওতা সম্প্রসারণসহ নানা উদ্যোগের মাধ্যমে নি¤œবিত্ত ও নি¤œ-মধ্যবিত্ত মানুষের দুর্দশা লাঘবের। আমরা আশা করি, খুব শিগগিরই আমরা এই অভিঘাত কাটিয়ে উঠতে পারব, ইনশাআল্লাহ।
প্রিয় দেশবাসী,
নির্বাচন এলেই মুক্তিযুদ্ধ, বাংলাদেশ এবং উন্নয়ন-বিরোধী একটি চক্র ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করে সক্রিয় হয়ে ওঠে। নির্বাচনে কুটকৌশল অবলম্বন বা কারচুপির মাধ্যমে কিংবা পিছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় যেতে তারা আটঘাট বেধে মাঠে নামে। সফল না হলে জনগণের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে প্রতিশোধ স্পৃহায়। অগ্নি-সন্ত্রাস, যানবাহন পোড়ানো, বোমাবাজি, নাশকতা বা সন্ত্রাসী কর্মকা-ের মাধ্যমে সাধারণ জনগণকে ভীত-সন্ত্রস্ত করে ঘরবন্দি করতে চায়। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তার ওপর এবার তারা বিদেশ থেকেও কলকাঠি নাড়ছে।
জনগণের ম্যান্ডেট পাবে না- এটা বুঝতে পেরে আগে থেকে এবার তারা সন্ত্রাসী কর্মকা-ে লিপ্ত হয়েছে। হরতাল-অবরোধের নামে যানবাহন পোড়ানো, মানুষ হত্যা, রেল-লাইন উপরে ফেলাসহ বিভিন্ন নাশকতা চালিয়ে যাচ্ছে। মা ও শিশুর অগ্নিদগ্ধ লাশ সকলের বিবেককে প্রচ-ভাবে নাড়া দিয়েছে। এই ধরনের হীন কাজ আর সহ্য করা যায় না। জনগণের সাড়া না পেয়ে ভাড়াটে বাহিনী দিয়ে এসব নাশকতা চালিয়ে জান-মালের ক্ষতি করছে। সন্ত্রাস করে নির্বাচন বানচাল করার স্বপ্ন-সাধ কোনদিনই তাদের পূরণ হতে দিবে না এদেশের জনগণ। ২০১৩-২০১৬ সময়ে যেমন আপনারা ওদের প্রতিহত করেছিলেন; আসুন, এবারও সম্মিলিতভাবে ওদের প্রতিহত করি। স্বাধীনতা-বিরোধী, উন্নয়ন বিরোধী এই শকুনের দল আর কোন দিন যাতে বিষময় দন্ত-নখর বসিয়ে বাংলাদেশকে ক্ষতবিক্ষত করতে না পারে- আসুন, এই বিজয়ের মাসে এ শপথ নেই।
সুধিবৃন্দ,
বিগত ১৫ বছরের সরকার পরিচালনার পথ-পরিক্রমায় যা কিছু ভুলত্রুটি তার দায়ভার আমাদের। সাফল্যের কৃতিত্ব আপনাদের। আমাদের ভুলত্রুটিগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আমরা কথা দিচ্ছি, অতীতের ভুলভ্রান্তি থেকে শিক্ষা নিয়ে আপনাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী ভবিষ্যৎ কর্মকা- পরিচালনা করবো।
বাবা-মা, ভাই, আত্মীয়-স্বজন সকলকে হারিয়ে আমি রাজনীতিতে এসেছি শুধু আমার বাবা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত কাজ শেষ করে এদেশের মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে। এ কাজ করতে গিয়ে আমাকে মৃত্যুর মুখোমুখি হতে হয়েছে বার বার। কিন্তু বাবার কথা ভেবে, আপনাদের কথা ভেবে আমি পিছ-পা হইনি। যতদিন আল্লাহ বাঁচিয়ে রাখেন, সুস্থ রাখেন, ততদিন যা কর্তব্য হিসেবে আমি গ্রহণ করেছি, সেখান থেকে সরে আসবো না। আপনাদের সেবক হিসেবে কাজ করার মধ্য দিয়েই আমি আমার বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে চাই।
প্রিয় দেশবাসী,
এই মুহূর্তে বাংলাদেশ এক ক্রান্তিকালে দাঁড়িয়ে। স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে সামিল হতে যাচ্ছে দেশ। এই উত্তরণ যেমন একদিকে সম্মানের, অন্যদিকে বিশাল চ্যালেঞ্জেরও। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সরকারকে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার সক্ষমতা থাকতে হবে। একমাত্র আওয়ামী লীগই পারবে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে দেশকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে। মায়ের ভাষায় কথা বলার অধিকার আদায়, মাতৃভূমির স্বাধীনতা থেকে শুরু করে এ দেশের যা কিছু মহৎ অর্জন, তা এসেছে আওয়ামী লীগের হাত ধরে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারক-বাহক বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের হাত ধরেই ২০৩১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উচ্চ মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ স্মার্ট ‘সোনার বাংলা’ প্রতিষ্ঠিত হবে। আসুন, আরও একবার বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচনি প্রতীক নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আমাদের জয়যুক্ত করে আপনাদের সেবা করার সুযোগ দিন। আপনারা আমাদের ভোট দিন, আমরা আপনাদের উন্নয়ন, শান্তি ও সমৃদ্ধি দিব।
কবির ভাষায় বলতে চাই-
“মেঘ দেখে কেউ করিসনে ভয়
আড়ালে তার সূর্য হাসে;
হারা শশীর হারা হাসি
অন্ধকারেই ফিরে আসে।”